সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ফুলদি এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ ফয়জুল হোসেন ফয়লার মেয়ে সৈয়দা তামান্না বেগমের ‘হত্যাকারী’ স্বামী আল মামুন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে তামান্না হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে মামুনের বোনের জামাই আটকের পর বর্তমানে জেলহাজতে আছেন।
সিলেট নগরীর উত্তর কাজীটুলার এলাকার অন্তরঙ্গ ৪/এ বাসার দুতলার তালাবদ্ধ একটি কক্ষ থেকে গত সোমবার (২৩ নভ্ম্বের) দুপুর দেড়টায় নববধূ সৈয়দা তামান্না বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগ থেকেই তামান্নার স্বামী আল মামুন পলাতক রয়েছেন।
গত সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তামান্নার ভাই সৈয়দ আনোয়ার হোসেন রাজা বাদি হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা ( নং ৫৮) দায়ের করেন। মামলায় নিহতের স্বামী মো. আল মামুনসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- এমরান, পরভীন, মাহবুব সরকার, বিলকিস ও শাহনাজ। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে কোতোয়ালি থানার এস.আই মান্নানকে। তিনি আজ শনিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে জানান, আসামিদের ধরতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে, তামান্নার স্বামী আল মামুন বর্তমানে বরিশালে আত্মগোপনে আছেন বলে একটি সূত্র জানায়। মামুনের গ্রামের বাড়ির (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক প্রতিবেশি জানান, মো. আল মামুনের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার হোগলারচরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম নিয়ারচর। সেখানে তার মামার বাড়ি। মামুন বর্তমানে সেখানেই আছে। মামুন ছাড়াও তার বোনসহ অন্য আসামিরাও সেখানে আছেন বলে সেই সূত্র জানায়।
চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের গোলাপগঞ্জের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আল মামুনের সঙ্গে বিয়ে হয় তামান্নার। মাত্র ৫৩ দিনের দিন তামান্নাকে প্রাণ হারাতে হয় ‘স্বামীর হাতে’। তামান্নাকে নিয়ে মামুন সিলেট নগরীর উত্তর কাজীটুলার এলাকার অন্তরঙ্গ ৪/এ বাসার দুতলার একটি কক্ষে থাকতেন। ২৩ নভেম্বর দুপুর দেড়টায় সেই কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় তামান্নার লাশ পড়ে থাকার পর খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে ।
পুলিশের ধারণা, স্ত্রীকে হত্যা করে পালিয়েছে স্বামী এবং রোববার (২২ নভেম্বর) রাতের কোনো এক সময় এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।
তামান্নার স্বামী মো. আল মামুনের জন্মস্থান বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার হোগলারচরে। তবে তার ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানায় রয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বারুতখানা এলাকার নাম। যেটি ভূয়া বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আইডি কার্ডে বাবার নাম আবুল কাশেম সরদার ও মা নাম আমম্বিয়া বেগম বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে সিলেটে তার মা-বাবা থাকেন না। স্বামীসহ তার এক বোন ও সে বসবাস করতো সিলেটে। মামুন নগরীর জিন্দাবাজারস্থ আল-মারজান শপিং সেন্টারের ঐশি ফেব্রিক্সের পরিচালক।
মামুনের নিহত স্ত্রী তামান্না বেগম দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের ফুলদি গ্রামের সৈয়দ ফয়জুল হোসেন ফয়লার মেয়ে। তবে তামান্নার ভাই-বোন এবং মা বর্তমানে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার এমসি একাডেমি সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। তার বাবা সৈয়দ ফয়জুল হোসেন ফয়লা তাদের সঙ্গে থাকেন না বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, মামুন আগেও একটি বিয়ে করেন। সে স্ত্রীর বাড়ি বরিশাল। মামুনের বিরুদ্ধে সিলেট কোতোয়ালি থানায় আগের স্ত্রীর দায়ের করা মামলাও রয়েছে। আগের স্ত্রীর ঘরে একটি সন্তানও রয়েছে মামুনের। এসব বিষয় গোপন করে সে তামান্নাকে বিয়ে করে। এ ক্ষেত্রে মামুনকে সহায়তা করেন মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্সের শাহনাজ পারভিন নামের এক মহিলা কর্মকর্তা। সেই মহিলাকেও তামান্না হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ওই মহিলা মামুনকে তার চাচাতো ভাই বলে পরিচয় দেন এবং তামান্নার পরিবারে বিয়ের জন্য পীড়াপিড়ি করতে থাকেন। বিয়ের সময় টাকা দিয়েও শাহনাজ পারভিন সাহায্য করেন তামান্নার পরিবারকে। এসময়ের শাহনাজ পারভিনের আচরণই আমাদের কাছে সন্দেহজনক ছিলো। এ বিয়েতে তামান্নার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যদের অসম্মতি ছিলো। কিন্তু শাহনাজ পারভিনের পীড়াপিড়িতেই এ বিয়েটি হয়।
এছাড়াও মামুনের ভূয়া আইডি কার্ড শাহনাজই তৈরি করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই শাহনাজের মূল বাড়িও বরিশাল। তিনি চাকরির সুবাধে সিলেটে বসবাস করেন। তবে তামান্নার মৃত্যুর দিন থেকে শাহনাজও গা ঢাকা দিয়েছেন। তাকেও গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।