সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক::বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর নেই। রোববার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কলকাতার একাধিক গণমাধ্যম তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
৬১ বছর ধরে বাংলার জনগণকে তাঁর অভিনয় গুণে মুগ্ধ করেছেন প্রতিভাধর এই মানুষটি। তিনি ছিলেন অভিনেতা, কবি ও আবৃত্তিকার। ৮৫ বছরের জীবনে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন দাদা সাহেব ফালকে, পদ্মভূষণসহ নানা সম্মনানা।
বাংলা সিনেমার অপু তিনি। প্রথম ফেলুদা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরু ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ দিয়ে। শুরুতেই দর্শক মনে আলাদা জায়গা করে নেয়া। সত্যজিতের ১৪টি সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়।
১৯৩৫ সালের ১৯শে জানুয়ারি, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্ম। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি ছিল কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কয়া গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রিট কলেজ থেকে সাহ্যিত্য নিয়ে। আইনজীবী বাবার বদলির কারণে শিক্ষাজীবন কাটে নদীয়া, হাওড়া ও কলকাতায়।
৬১ বছরের অভিনয় জীবন। মৃণাল সেন, তপন সিংহ ও অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ‘দেবদাস’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘অশনি সংকেত’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘চারুলতা’, শাখা-প্রশাখা, ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দাগ কেটেছে দর্শকমনে। ২২০ এর বেশি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
অভিনয়ে আসার আগে বেতারের ঘোষক ও মঞ্চনাটকই ছিলো তাঁর সৃজনশীলতার ক্ষেত্র। কবিতা লিখেছেন। কবিতা নিয়ে কাজ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আবৃত্তিকার হিসেবে রয়েছে তার নিজস্ব জায়গা।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০০৪ পেয়েছেন পদ্মভূষণ। ২০১২ সালে পান সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার। এরপর ২০১৭ সালে ঝুলিতে জমে ফ্রান্সের ‘ লেজিয় দ নর’ সম্মাননা। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি ও ফিল্ম ফেয়ারসহ আরো নানা পুরস্কার।
কাজ থেকে অবসরে যাননি তিনি। বেলাশেষে, পোস্ত, সমান্তরাল, শেষ চিঠি, ময়ূরাক্ষী ও সাঁজবাতিসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন সম্প্রতি। তাকে নিয়ে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের তথ্যচিত্র ‘অভিযানে’ও কাজ করেন সৌমিত্র।
অভিনয় শিল্পীর; এই পরিচয়ের পাশাপাশি সংস্কৃতজন হিসেবে আলাদা মর্যাদার জায়গা তৈরি করেছেন তিনি। রাজনৈতিক সচেতন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মনে, মননে কাজে প্রগতিশীল, থেকেছেন মানুষের মুক্তির মিছিলে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৬ অক্টোবর কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন সৌমিত্র। দুবার প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার পর করোনামুক্ত হয়েছিলেন ৮৫ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৫৯ সালে অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়জগতে পা রাখেন। এরপর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। কবি ও আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও তিনি বেশ পরিচিত।