ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে সকলের পরামর্শ ও সহযোগিতা চাই : মেয়র আরিফ
সিলেট নগরীকে এক সপ্তাহের মধ্যে হকারমুক্ত করার দাবি উঠেছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে সিলেট চেম্বার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি উঠে। মতবিনিময় সভায় কয়েকজন বক্তা বলেন, গুটিকয়েক হকারের কারণে সিলেট নগরী জিম্মি হতে পারে না। নগরীকে হকারমুক্ত না করলে তারা রাজপথে নামতে বাধ্য হবেন। নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে সিলেটের সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান হিরোর আমলের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার ওপরও জোর দেন বক্তারা। অবশ্য, সভায় হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও উঠে আসে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চেম্বার কনফারেন্স হলে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মোঃ শোয়েব।
সভায় সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরীকে পরিচ্ছন্ন, আধুনিক ও একটি পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে নগরীর রাস্তা-ঘাট ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে তিনি অবিরত চেষ্টা চালাচ্ছেন। সিলেটের সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু সচেতনতা ও কিছু কিছু মহলের অসহযোগিতায় এ ক্ষেত্রে সফল হওয়া যাচ্ছে না। ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, আমাদের অভিযানকালে হকাররা চলে যায়। কিন্তু, অভিযান শেষ হবার পর তারা আবার স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, কোর্ট পয়েন্ট ও জিন্দাবাজার এলাকায় সবসময়ই হকাররা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করে।
কিন্তু পাশেই রয়েছে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশ প্রশাসন চাইলে হকারদের ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করতে পারে। তিনি বলেন, হকারদের সাথে আলোচনাক্রমে আমরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে তাদের বসার সুযোগ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু, তারা দিন দিন যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং আমাদের তৎপরতার বিরুদ্ধে মিছিল, মানববন্ধন করছে তাতে আগামীতে এসব হকারদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দসহ সকলের পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় ব্যবসায়ীগণ ফুটপাত দখলকারী হকাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করি। কিন্তু হকারদের দৌরাত্ম্যে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রাখায় সাধারণ পথচারী এবং নগরবাসীও অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, চেম্বারের নেতৃত্বে ইতোপূর্বে আমরা অনেকবার হকারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু বিষয়টির স্থায়ী কোন সমাধান এখনও হয়নি। তারা বলেন, হকারদের দৌরাত্ম্যের নেপথ্যে কারা রয়েছে-সেসব ব্যক্তিদেরকে আমরা চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে। ব্যবসায়ীগণ ফুটপাত দখলমুক্তকরণে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উদ্যোগের বিরুদ্ধে সম্প্রতি হকারদের মিছিলের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা মেয়রের ডাকে যেকোন সময় সাড়া দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে হকারদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামবেন। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ হকারদের প্রশ্রয় দাতা, অসাধু ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার আহবান জানান। হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে শুক্রবারে হলিডে মার্কেট চালু করা যেতে পারে বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন।
সভায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। ঘুষখোর এবং দুর্নীতিবাজরা যে দলেরই হোক না কোন তারা সমাজের শত্রু, জাতির শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, হকারদেরকে হুট করে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদেরকে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। শহরের কোলাহলমুক্ত কিছু রাস্তায় তাদেরকে পুনর্বাসন করা যেতে পারে এবং আমরা সেখানে তাদের কাছ থেকে পণ্য সামগ্রী কিনতে পারি। তিনি বলেন, সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন সিলেটের জনসাধারণের যেকোন সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত আন্তরিক। সভায় আলোচিত ফুটপাত দখলমুক্তকরণের বিষয় নিয়ে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনার আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনারের সাথেও আলোচনা করবেন বলে জানান।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট এ. টি. এম. ফয়েজ বলেন, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ফুটপাত দখলমুক্তকরণে মেয়রের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের আর্থিক দিক বিবেচনায় এসব হকারদের যত্রতত্র বসতে দেওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে তিনি তাদের অস্থায়ী দোকানগুলোর অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার প্রস্তাব জানান। নগরীকে হকারমুক্ত করার বিষয়ে সিলেটবাসী ঐক্যবদ্ধ। হকারদের নিয়ে রাজনীতি না করারও আহ্বান তার। তিনি এসব অবৈধ হকারদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে আদালতে দায়েরকৃত মামলার ফলোআপ নিবেন বলে জানান। এছাড়াও তিনি এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের যেকোন আইনী সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মোঃ শোয়েব বলেন, ব্যবসায়ীদের সকল ধরণের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সিলেট চেম্বার অতীতের মতো ভবিষ্যতেও ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে। তিনি ফুটপাত হকারমুক্তকরণে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এ বিষয়ে নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনারের সাথে আলোচনার জন্য সিলেট চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। উপস্থিত সকলেই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। চেম্বার সভাপতি ফুটপাত দখলমুক্ত করণে সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বারের সহসভাপতি তাহমিন আহমদ, পরিচালক মোঃ মামুন কিবরিয়া সুমন, পিন্টু চক্রবর্তী, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, মোঃ আব্দুর রহমান (জামিল), হুমায়ুন আহমেদ, আলীমুল এহছান চৌধুরী, মোঃ আমিনুজ্জামান জোয়াহির, খন্দকার ইসরার আহমদ রকী, ফখর উস সালেহীন নাহিয়ান, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোঃ ফজলুল হক সেলিম, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ মোঃ রেনু, সাবেক সভাপতি আহমেদ নূর ও ইকরামুল কবির, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো প্রধান শাহ্ দিদার আলম নোবেল, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল, সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব শেখ মোঃ মকন মিয়া, মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোঃ আব্দুর রহমান রিপন, সেক্রেটারি মোঃ নজমুল ইসলাম, মোঃ আলা মিয়া, হোসেন আহমদ, নিয়াজ মোঃ আজিজুল করিম, আব্দুল হাদী পাবেল, আব্দুস সামাদ তোহেলসহ বিভিন্ন মার্কেট এবং ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।