সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক::সাইক্লিং করার সময় রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে গাড়িচাপায় পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্না (৩৩) নিহতের ঘটনায় আরও এক গাড়িচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকা থেকে গেল শুক্রবার টয়োটা মাইক্রোবাসসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার নাম দারুস সালাম। তিনি গাড়িটির মালিকও। ইতোমধ্যে আদালতের মাধ্যমে তাকে দুদিনের রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ। দ্বিতীয় দিনের রিমান্ড চলছে আজ (শনিবার)।
শনিবার বিকালে যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রুবায়েত জামান।
এর আগে এই মামলায় মো. নাঈম নামের আরও এক গাড়িচালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকেও রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সিসিটিভি ফুটেজে নাঈমের গাড়ি ও দারুস সালামের গাড়ি পাশাপাশি দেখা গেছে। তাই দারুস সালামকেও গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
গত ১৮ আগস্ট ৩৮২টি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পর্বতারোহী রেশমা আক্তার রত্না নিহতের ঘটনায় জড়িত মাইক্রোবাসসহ চালক নাঈমকে (২৭) গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজধানীর ইব্রাহিমপুর থেকে কালো রঙের মাইক্রোবাসসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ জানিয়েছিল, ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকার প্রয়োজনীয় সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য তিনটি পৃথক টিম গঠন করা হয়। কালো মাইক্রোবাসটির সম্ভাব্য যাত্রাপথ ধরে মাইক্রোবাসটির অবস্থান শনাক্তে কাজ শুরু করা হয়।
তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন-অর-রশীদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কালো মাইক্রোবাসটির সম্ভাব্য যাত্রাপথ ধরে এটির অবস্থান শনাক্তে কাজ শুরু করা হয় প্রথম দিন থেকেই। প্রাথমিকভাবে মূল সড়ক, অন্যান্য সড়ক, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক স্থাপনার প্রবেশ পথে থাকা ৩৮২টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে ঘটনার কিছু সময় পূর্ব ও পরে মাইক্রোবাসটির যাত্রাপথ শনাক্তে সক্ষম হই। এসব সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে কালো হাইএস মডেলের মাইক্রোবাসটির বেশকিছু অস্পষ্ট ডিজিটাল নম্বর প্লেটের ছবি পাওয়া যায়। প্রাপ্ত নম্বরগুলো কিছুটা স্পষ্টকরণপূর্বক প্রাথমিকভাবে ১১২টি মাইক্রোবাসের বিষয়ে কাজ শুরু হয়। ৪টি আলাদা টিম গঠন করে বিআরটিএসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এ সকল মাইক্রোবাসের মালিকানা, রঙ, সিটের সংখ্যা সংগ্রহ করে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করি।
প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট সকালে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে মাইক্রোবাসের চাপায় গুরুতর আহত হন সাইকেলআরোহী রত্না। তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সাইক্লিস্ট সাবিনা ইয়াসমীন মাধবী জানান, রেশমা রত্না পর্বতারোহী, দৌড়বিদ এবং সাইক্লিস্ট ছিলেন। তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতেন।
রেশমার সাইকেলটি পেছন থেকে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। সেটি ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ জব্দ করেছে।
২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের লাদাখে অবস্থিত স্টক কাঙরি পর্বত এবং ৩০ আগস্ট কাং ইয়াতসে-২ পর্বতে সফলভাবে আরোহণ করেন রত্না। দুটি পর্বতই ছয় হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার। এরপর ২০১৮ সালে আফ্রিকার উচ্চতম পর্বত মাউন্ট কিলিমানজারো ও দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত মাউন্ট কেনিয়া অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের পাহাড় কেওক্রাডংয়ের চূড়া স্পর্শ করার মাধ্যমে শুরু হয় রেশমা রত্নার অভিযান। ওই বছরই মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশিতে অবস্থিত পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিইনিয়ারিংয়ে যান তিনি। কিন্তু অ্যাডভ্যান্স বেজক্যাম্পে যাওয়ার পর তার পায়ে ফ্র্যাকচার হয়। দেশে ফেরার পর সুস্থ হতে লেগে যায় দীর্ঘদিন। পরবর্তী সময়ে নিজ উদ্যোগে সফলভাবে পর্বতারোহণের মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
পর্বতারোহী ও সাইক্লিস্ট উদ্যমী এই তরুণী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরি, আলোর ইশকুলের কর্মসূচি, পাঠচক্রসহ নানা উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন।