পুত্র হত্যার বিচার চেয়ে রাজপথ কিংবা আদালত সবখানেই সরব রয়েছেন পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। এবার তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। আবেদন করেছেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে যে রিট আবেদন করা হয়েছিলো তাতে তিনিও একজন আবেদনকারী (পক্ষভুক্ত) হতে চান। অন্যদিকে, দুই দফায় আট দিন রিমান্ড শেষেও আলোচিত এ মামলার আসামী বহিষ্কৃত পুলিশ কনস্টেবল হারুনুর রশীদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। রায়হান হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বসে নেই এলাকাবাসীও। রোববার রাতে নতুন কর্মসূচি দিতে সভা করেছেন বৃহত্তর আখালিয়া বারো হামছায়া সংগ্রাম পরিষদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। গতকাল রোববার হাইকোর্টে আবেদন দিয়ে বলেছেন, তার ছেলেকে পুলিশী হেফাজতে হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে যে রিট আবেদন করা হয়েছে তাতে তিনি একজন আবেদনকারী (পক্ষভুক্ত) হতে চান। আজ সোমবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন সালমা বেগমের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমদ।
পুলিশ হেফাজতে রায়হান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে গত ১২ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদন (রিট নম্বর-৭১৩২/২০২০) করেন ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমদ। রায়হানের মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে ওই রিট আবেদন করা হয়।
অপরদিকে, পুত্র হত্যাকান্ডের পর থেকে এলাকাবাসীর সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচীতে সমানতালে অংশ নিয়ে যাচ্ছেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। সর্বশেষ ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশফাঁড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচী পালন করে দেশ ও দেশের বাইরে গণমাধ্যমে শিরোনাম হন সালমা। পুলিশের হেফাজত থেকে পুলিশের এসআই আকবরের পালিয়ে যাওয়াসহ ‘আমার ছেলে কবরে, পুলিশ কেন বাইরে’সহ নানা আবেগঘন কথাবার্তা বলে মাঠে সরব রয়েছেন সালমা। সর্বশেষ দেশের উচ্চ আদালতেও ছুটে গিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, দুই দফায় আট দিন রিমান্ড শেষেও রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া বহিস্কৃত পুলিশ কনস্টেবল হারুনুর রশীদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। ২য় দফা রিমান্ড শেষে গতকাল রোববার দুপুরে হারুনুর রশীদকে সিলেটের অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হয়। আদালতে হারুনুর রশীদ জবানবন্দি দিতে রাজী না হওয়ায় বিচারক জিয়াদুর রহমান তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
গত ২৯ অক্টোবর হারুনুর রশীদকে দ্বিতীয় দফায় ৩ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। এই মামলায় প্রথমদফায় তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিলো। এরআগে আরেক পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকেও দুই দফায় ৮ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। তবে তিনি এ ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেননি। এছাড়া, এএসআই আশেক-ই এলাহিকে গ্রেফতার করে গত ২৯ অক্টোবর ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই। বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
অন্যদিকে, রায়হান হত্যা মামলায় এখনো রাজ পথে রয়েছেন বৃহত্তর আখালিয়া এলাকাবাসী। তারা আখালিয়া বারো হামছায়া সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে নানা কর্মসূচী নিয়ে মাঠে রয়েছেন। গতকাল রোববার রাতেও নতুন কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে সভা করেছেন এলাকাবাসী। আজ রায়হত্যাকান্ডের মূল হোতা এসআই আকবরকে গ্রেফতার করতে সোমবার নতুন কর্মসূচী ঘোষণা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ অক্টোবর রাতে নগরীর আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদ (২৪) কে ধরে নিয়ে আসে বন্দরবাজার থানা পুলিশ। ওই রাতে ফাঁড়িতে তার ওপর নির্যাতন চালায় পুলিশ এবং তাকে ছেড়ে দিতে টাকা দাবি করে। ভোরে অপরিচিত একটি মোবাইল থেকে রায়হানের ফোন পায় তার পরিবার। তাতে ফাঁড়ি থেকে তাকে ছেড়ে দিতে টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে জানান রায়হান।
নির্যাতনের পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ১১ অক্টোবর সকালে রায়হান আহমদকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান তিনি। পুলিশ দাবি করে, রায়হানকে ছিনতাইকারী সন্দেহ করে জনতা গণপিটুনি দেয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। তবে সিসিটিভি ফুটেজে এর কোনো প্রমাণ মেলেনি। এ ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। মামলার পর এর তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এর জেরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলী করা হয়েছে।