নিজস্ব প্রতিবেদক:: দক্ষিণ সুরমার তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি। সেই সুবাদে প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় লালাবাজার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবার লালাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনের পালা। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছেন আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ।
তবে অভিযোগ উঠেছে, একটি অংশ লালাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির ‘পকেট কমিটি’ বা‘ সমঝোতার কমিটি’ গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছেন। অন্য একটি পক্ষ কোনো ‘পকেট কমিটি’ চাননা, তারা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের গণতান্ত্রিক চর্চার প্রেক্ষিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে কমিটি চান।
দলীয় সূত্র জানায়, বিগত সংসদ, উপজেলা ও ইউনিয়ন নির্বাচনের পর দলীয় নেতৃবৃন্দের কোন আনাগোনা লক্ষ্য করা না গেলেও কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতৃবৃন্দ কিছুটা জেগে উঠেছেন। নিয়মিত কর্মী যোগাযোগসহ বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও গণসংযোগের মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।
আসন্ন সম্মেলনে লালাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে সভাপতি প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি জিলা মিয়া মেম্বার, সাবেক সেক্রেটারি ও দক্ষিণ সুরমা শ্রমিক দলের সেক্রেটারি শহীদ রেজা এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ত্যাগী নেতা লালাবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দিলাল খান।
অন্যদিকে, এবার ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি প্রার্থীর দৌঁড়েও রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন, গতবারের কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাইমিনুল ইসলাম সোহেল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সদস্য নানু মিয়া ও জেলা বিএনপির সদস্য আমিনুর রহমান চৌধুরী সিফতা।
ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ড কমিটির নেতারা জানান, সভাপতি পদে এবার তেমন কোনো লড়াই নেই। তবে সেক্রেটারি পদ ভাগিয়ে নিতে চলছে ‘পকেট কমিটি’ গঠনের তোড়জোড়। দলের একটা অংশ ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় চাচ্ছেন ‘সমঝোতার ভিত্তিতে’ পকেট কমিটি করার। কিন্তু ৯টি ওয়ার্ডের ২৭টি ভোটের অধিকাংশরাই চান একটা স্বচ্ছ ত্যাগী কমিটি। আর এ জন্যে আসন্ন কাউন্সিলে ভোটভুটির কোনো বিকল্প নেই। লালাবাজারের ইউনিয়ন কমিটিতে আগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন-এমন ত্যাগী ও শক্ত ব্যাকগ্রাউন্ডের নেতাকে তারা সেক্রেটারি হিসেবে দেখতে চান। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করছেন বা ইতিপূর্বে সেক্রেটারি বা যুগ্ম সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন-সেরকম নেতাদের সম্মান দিয়ে আরও উপরে দেখতে চান বিএনপির কর্মীরা। তারা কোনো সুযোগ-সন্ধ্যানী নেতাকে হুট করে এক লাফেই উনিয়নের নেতা হিসেবে দেখতে চাননা। কোনো পকেট কমিটি হলে তৃণমূলের কর্মীরা বর্জন করে প্রতিবাদেও নেমে পড়তে পারেন বলে হুঁশিয়ারি রয়েছে।
এ ব্যাপারে আলাপকালে লালাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী শহীদ রেজা বলেন, ‘বিএনপি একটা গণতান্ত্রিক দল। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটা পরিচ্ছন্ন কমিটি চাই। যে কমিটি নিয়ে কারো আপত্তি থাকবেনা।’
লালাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি প্রার্থী সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাইমিনুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘আমার ৯টি ওয়ার্ডের ২৭ জন ভোটার কাউন্সিলে ভোট দিবেন। তাদের ভোটাভুটির মাধ্যমে কমিটি করা হোক। মুখ দেখে সমঝোতা করে কাউকে নিয়ে পকেট কমিটি হলে সবার আগে দল ক্ষতির শিকার হবে, লাভবান হবেন একজন ব্যক্তি। আশা করি, গণতান্ত্রিক চর্চার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে কমিটি করা হবে, পকেট কমিটি হবেনা।’
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক, লালাবাজার ইউনিয়নের বাসিন্দা লোকমান আহমদ বলেন, ‘লালাবাজার বিএনপিতে ৯টি ওয়ার্ডে ২৭ জন ভোটার আছেন। তাদেরকে নিয়ে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বসে আলোচনা করা হবে। তারা যদি সমঝোতায় কমিটি মানেন, তা গঠন করা হবে। তাদের অধিকাংশই যদি ভোটাভুটিতে মত দেন, তাহলে সমঝোতা বাদ দিয়ে ইলেকশনে কমিটি গঠন করা হবে।’
সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গিরদার বলেন, ‘লালাবাজারের ৯টি ওয়ার্ডের ভোটাররা ভোট দিয়ে সভাপতি, সেক্রেটারি নির্বাচিত করবেন। কোনো পকেট কমিটি হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’