পলাতক এসআই আকবরকে গ্রেফতারে সবাই চেষ্টা করছে, যত দ্রুত সম্ভব সে গ্রেফতার হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)-এর নবাগত কমিশনার নিশারুল আরিফ। সিলেটে পৌঁছেই তিনি পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হানের বাড়িতে ছুটে যান। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, পুলিশ হেফাজতে রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত। এর সাথে পুলিশ সদস্যরা জড়িত থাকায় আমি লজ্জিত। এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার এসাইনমেন্ট নিয়েই আমি সিলেটে এসেছি। অন্যদিকে রায়হান হত্যা মামলার কার্যক্রম যথানিয়মে চলছে। আজ (বুধবার) রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনায় বরখাস্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির অপর কনস্টেবল তৌহিদকে গ্রেফতার দেখাতে পারে পিবিআই।
নিহত রায়হানের বাড়িতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নবাগত এসএমপি কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, আমি নিজস্ব একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি। এছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সকল কিছু গোছানো সম্ভব। তিনি বলেন, এসআই আকবরকে কেউ যদি মদদ দিয়ে থাকে সবাইকে শনাক্ত করা হবে। সম্পৃক্ততা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারাও মামলার আসামি হবেন।
পলাতক এসআই আকবর প্রসঙ্গে নবাগত কমিশনার বলেন, পলাতক এসআই আকবরকে গ্রেফতার করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট কাজ করছে। তবুও জনসাধারণের মধ্যে কেউ আকবরের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেন বা ধরতে পারবেন। আর যদি আকবরকে জনসাধারণের কেউ গ্রেফতার করেন; তাহলে দ্রুত আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
এর আগে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় ওসমানী বিমানবন্দরে নেমে তিনি নিজের কর্মস্থলে যোগদানের আগেই সোজা হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে যান এবং সেখানে এশার নামাজ আদায় করেন। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে আখালিয়ার নেহারিপাড়ায় রায়হানের বাড়িতে যান এসএমপির নবনিযুক্ত এই কমিশনার।
নবাগত কমিশনার নিশারুল আরিফ এসপিবিএন-এর উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি থাকাকালে ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান তিনি। এরপর ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিশারুল আরিফকে এসপিবিএনের উপ-মহাপরিদর্শক হিসেবে পদায়ন করা হয়। গত ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখা থেকে বদলির প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে পুলিশের স্পেশাল প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) ডিআইজি পদে বদলির পর নিশারুল আরিফকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়।
অন্যদিকে, আজ বুধবার সিলেটে রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনায় বরখাস্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির অপর কনস্টেবল তৌহিদকে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র। গতকাল মঙ্গলবার নিহত রায়হানের স্বজনদের সান্তনা দিতে গিয়ে নবাগত পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ আশ্বস্ত করে বলেন, একে একে সকল অভিযুক্তকে গ্রেফতার দেখানো হবে, এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
প্রসঙ্গত গত ১০ অক্টোবর দিবাগত রাত তিনটার দিকে রায়হানকে কতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে রায়হান মারা যান। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি পরদিন হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। মামলায় আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন সহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে। আকবর ১৩ অক্টোবর থেকে পলাতক আছেন।
রায়হান নগরীর একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন। তিনি স্ত্রী, আড়াই মাস বয়সী এক মেয়ে ও মাসহ আখালিয়ার নেহারিপাড়ায় বসবাস করতেন। পুলিশ হেফাজতে তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ‘বৃহত্তর আখালিয়া সংগ্রাম পরিষদ’ নামে এলাকাবাসীর সম্মিলিত মোর্চা প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে তৎপর। এসআই আকবরসহ জড়িত সবাইকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন চলছে।