আবু মারওয়ান:: আব্দুল বারী চৌধুরী একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ছিলেন । তিনি একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। নিজ এলাকার উন্নয়নই ছিল তার মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যেই সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করে গেছেন আজীবন। আলোকিত সমাজ নির্মাণের কারিগর আব্দুল বারী চৌধুরীর রেখে যাওয়া আদর্শ ও ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস। প্রেরণার বাতিঘর আব্দুল বারী চৌধুরীর সুন্দর সমাজ নির্মাণের চেষ্টার ফসল আজকের উন্নত ও আধুনিক মুন্সিরবাজার এলাকা।
ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের নির্যাতিত মানুষের দুঃখ-কষ্টে ব্যতীত হতেন। নিজে একজন ভূ-স্বামী (মিরাশদার) পরিবারের সদস্য থাকা সত্ত্বেও তিনি জমিদারি প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন, তাঁর স্বাধীনচেতা চিন্তা ভাবনার ফলস্বরূপ তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সংঘবদ্ধ ছিলেন। ১৯৪০ ইংরেজি সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে তিনি জোরালো ভূমিকা রাখেন।
১৯৪৭ ইংরেজী সালে ভারত থেকে পাকিস্তান আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত হলে ১৯৪৭ ইংরেজী সালে সিলেট জেলা ভারত – না পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত থাকবে এ নিয়ে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল তাতে তিনি একজন মুসলিম নেতা হিসেবে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারণা চালিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা করেন , অতঃপর গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এবং তখন থেকে তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগের জেলা পর্যায়ের নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন । সেই সাথে তিনি পাকিস্তান সরকারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে থাকেন।
তার বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলাফলস্বরূপ তিনি ১৯৬২ ইংরেজী সালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওয়াড সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন, এবং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি এলাকার উন্নয়নে বিশেষ বিশেষ ভূমিকা পালন করে এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং গরীব মেহনতী মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকেন, তিনি সকলের বিপদে-আপদে, সহজ-সরল মজলুম মানুষের পাশে ছায়ার মতো কাজ করতে থাকেন তাহার বহুমূখী উন্নয়ন এবং সমাজসেবী কাজের জন্য অতি অল্প দিনের মধ্যে তিনি এলাকার মানুষের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন। তৎকালীন সময়ে বেতসান্দি গ্রামের হারিছ মিয়া, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন, কোন কারনে হারিছ মিয়ার সাথে পরিষদের সদস্যগণ এবং ইউনিয়নের প্রথমসারির মুরব্বিয়ানদের বিরুধ সৃস্টি হলে, সকলে ঐক্যবদ্দ হয়ে আব্দুল বারী চৌধুরী কে ১৯৬৪ ইংরেজী সালে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদান করেন। তার দায়িত্ব নিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়ে পরবর্তীতে ১৯৬৫ ইংরেজী সালে ইউনিয়ন নির্বাচনে ইউনিয়নবাসি ভোটের মাধ্যমে তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন।
উল্লেখ্য ১৯৬৪ ইংরেজী হতে ১৯৬৫ ইংরেজী সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ১৯৬৫ ইংরেজী সাল হতে ১৯৭৩ ইংরেজী সাল পর্যন্ত তিনি অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুল বারী চৌধুরী সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার ৩নং অলংকারী ইউনিয়ন এর মুন্সির বাজার এলাকার মুন্সির গাঁও এর এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৫ ডিসেম্বর১৯২২ ইংরেজি সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল মনাফ চৌধুরী মাতার নাম আমেনা খাতুন চৌধুরী। তারা দুই ভাই দুই বোন, ভাইবোনদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
তথ্যসূত্রে জানা যায় আব্দুল বারী চৌধুরী মুসলিম ধার্মিক মিরাশদার মুন্সি গোলমোহাম্মদ চৌধুরীর ষষ্ঠ বংশধর।
এখানে উল্লেখ্য যে মুন্সি গোলমোহাম্মদ চৌধুরী তৎকালীন সময়ে এলাকার সর্ব সাধারণের নিকট মুন্সী নামে বেশ পরিচিত ছিলেন, লোকমূখে জানা যায় তাঁরই নামানুসারে তৎকালীন সময় থেকে উক্ত গ্রামটির নাম মুন্সির গাঁও নামে পরিচিতি লাভ করে। মুন্সির গাঁও নামকরনের পূর্বে উক্ত গ্রামটি ফরহাদ পুর গ্রামের নামে পরিচিতি ছিল।
আব্দুল বারী চৌধুরী ১৯২৮ ইংরেজী সালে পিতার হাতধরে স্থানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে শহরের কোন একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীতে লেখা পড়ায় থাকাবস্থায় তার পিতা মৃত্যুবরন করেন। পিতার অকাল মৃত্যুতে মা ও ভাই বোনদের নিয়ে পরিবার ও সম্পত্তি দেখাশুনার দায়িত্য তাহার উপর ন্যস্ত হওয়ায় শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি আর বেশিদূর এগুতে পারেননি।
উল্লেখ্য :- স্বরপঞ্চও প্রথা বিলুপ্ত করে ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন কাউন্সিল পদ্ধতি চালু হয়েছিলো, যেখানে ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন এবং মেম্বারদের অনাস্থা ভোটে বরখাস্ত হতেন। ১৯৭৩ সালের পর ইউনিয়ন পরিষদ হিসাবে স্হানীয় সরকার পদ্ধতি চালু হয় যা অদ্যবদি চলমান রয়েছে, জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রক্রিয়া।
আব্দুল বারী চৌধুরী ১৯৪৫ ইংরেজী সালে ভারতীয় মুসলিম লীগে যোগদান করেন, এবং তখন থেকেই তাহার রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৪৭ ইংরেজী সালে ভারত থেকে পাকিস্তান আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত হলে তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগের পক্ষে কাজ শুরু করেন।
১৯৬৭ ইংরেজী সালে তিনি সিলেট জেলার প্রথম সারির নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে জেলা মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্য পালন করে পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পুর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালিন সময়ে ৬০ থেকে ৭০ দশকে তাহার রাজনৈতিক জীবনে ঘনিষ্ঠজন যারা ছিলেন তারা হলেন ডাক্তার মরহুম আব্দুল মজিদ, সাবেক মন্ত্রী মরহুম দেওয়ান আব্দুল বাসিত, সাবেক মন্ত্রী মরহুম আব্দুস সালাম, সাবেক মন্ত্রী মরহুম আজমল আলী চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী মরহুম দেওয়ান তৈমুর রাজা, সাবেক মন্ত্রী মরহুম দেওয়ান আব্দুর রউফ প্রমুখ।
তিনি ১৯৭০ ইংরেজী সালের পাকিস্তান গণপরিষদ নির্বাচনে বিশ্বনাথ-দক্ষিন সুরমা আসন থেকে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন,
কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে এই জননন্দিত নেতা বিজয় অর্জন করতে না- পারলেও এই আসনের সর্বস্থরের মানুষের হৃদয়ের শ্রদ্ধার আসনে অধিস্টিত হতে পেরেছিলেন।
১৯৭১ ইংরেজী সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি মুসলিম লীগের নামধারী নেতা হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করতে থাকেন, যার সাক্ষী তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ এবং মুক্তিযোদ্ধারা।
তিনি বিশ্বনাথ থানা সহ বাসিয়া নদীর পশ্চিম তীরবর্তী এলাকার জনসাধারণকে নিরাপদ রেখেছিলেন।
তিনি হিন্দু সম্পত্তি ও জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং হিন্দু পরিবারকে নিজে থাকার সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছিলেন তাহার বাড়িতে এবং সিলেট শহরস্থ লামাবাজার ওয়াডের বিলপাড়ের তাহার আরেকটি বাড়িতে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধার্থে থাকার স্থান করে দিয়েছিলেন। মুক্তি যুদ্ধকালীন দুর্যোগ মুহূর্তে এলাকার কিছু কিছু মানুষ যখন অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে জনসাধারণকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছেন। শুধুমাত্র তার দূরদর্শিত বুদ্ধিমত্তার কারণেই এই এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক কোন মানুষের জানমালের ও ইজ্জতের কোন প্রকার ক্ষতি হয়নি। মূলত তিনি মুসলিম লীগ নামক সাইনবোর্ড ব্যবহারের মাধ্যমে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিকের ভূমিকা পালন করে এলাকাবাসী কে নিরাপদে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আব্দুল বারী চৌধুরী সিলেট কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসাবে যোগদান করার পর ১৯৭৭ ইংরেজি সাল পর্যন্ত সিলেট কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন, এ দায়িত্ব পালনকালে সর্বমহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হন। তাহার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন সমবায় আন্দোলনের পর ১৯৯০ ইংরেজী সালে এরশাদ সরকারের আমলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী, নাজিউর রহমান, কুমিল্লা কোটবাড়ি ওসমানীনগর স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সমবায়ীদের নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করেন, উক্ত সেমিনারে আব্দুল বারী চৌধুরীকে ১৯৮৭ ইংরেজী সালের সিলেট জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমবায়ী ব্যক্তি হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করে পুরস্কার প্রদান করেন। আজও এই বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম সিলেট কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যংকে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে পরিচিতি রয়েছে।
১৯৫৮ ইংরেজী সালে এলাকাবাসি এলাকার জনগনের কল্যানের জন্য একটি বাজার স্থাপনের উদ্যোগ নিলে যখন বাজার স্থাপনের জন্য কোন ভূমি পাওয়া যাচ্ছিলনা তখন তিনি তাহার
( একই বংশীয় ) এক দাদা মৌলভী আব্দুল জব্বার চৌধুরী ও ( একই বংশীয় ) আরেক চাচা মৌলভী আব্দুর রহিম চৌধুরী’র সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাজার স্থাপন করতে ভূমি দান করার জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করে ২২.৫০ শতক করে দুজনের মাধ্যমে মোট ৪৫ শতক ভূমি ফি ছাবিলিল্লাহ দান করিয়ে এলাকাবাসির স্বপ্ন পূরনে গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা পালনের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে উৎসাহিত করেন। যেহেতু বাজার প্রতিষ্ঠায় ভূমি দাতাগন মুন্সির গাঁও এর বাসিন্দা ছিলেন তাই এলাকাবাসিও ভূমি দাতাগনদের সম্মান জানিয়ে উক্ত বাজারের নাম -: মুন্সির বাজার :- নাম করন করেন।
পরবর্তীতে বাজারে জন-সমাগম বাড়তে থাকায় বাজার ও মসজিদে সংকুলান হচ্ছিলনা, তখন এলাকাবাসি বাজার ও মসজিদের ভূমি বর্ধিত করার উদ্যোগ নিলে তিনি নিজের ৮ শতক ভূমি বাজার মসজিদে ফি-ছাবিলিল্লাহ দান করে এলাকাবাসিকে উৎসাহিত করেন। তিনি মুন্সির বাজার প্রতিস্ঠা লগ্ন হতে বাজার জামে মসজিদের ক্যশিয়ারের দায়িত্য পালন করেন এবং পরবর্তীতে মোতাওয়াল্লী ও সভাপতির দায়িত্য পালন করেন মৃত্যুর কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত।
ইতিপূর্বে এলাকার ডাকঘর লালাবাজার ছিল, সে ক্ষেত্রে দূরত্বের জন্য এলাকার মানুষের অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হত, তাই এলাকার মানুষ মুন্সির বাজারে একটি ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, যেহেতু এই এলাকা একটি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা সেহেতু এলাকার ডাক যোগাযোগে যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটত।তখন জনাব আব্দুল বারী চৌধুরী সাহেব এর উৎসাহে বেতসান্দি গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ এর প্রচেষ্টায় বেতসান্দি নামে একটি ডাকঘর অনুমোদিত হয়, কিন্তু ডাকঘর স্থাপনের জন্য তখন ভূমির অভাব দেখা দিলে আব্দুল বারী চৌধুরী নিজ উদ্যোগে ডাকঘর স্থাপনের জন্য মুন্সির বাজারের পাশেই নিজের ভূমি ফি-ছাবিলিল্লাহ দান করেন, তখন থেকেই বেতসান্দি নামে, মুন্সির বাজারে একটি ডাকঘর প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সমাজ সেবায়,
আব্দুল বারী চৌধুরীর বাড়িতে অনেক সময় অনেক সরকারি-বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের স্থান ছিল যেমন :- (১)তাহার বাড়ীতে বিশ্বনাথ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের ভূমি অফিস ( তফসিল অফিস )ছিল।
(২) বিশিষ্ট এনজিও সংস্থা ব্রাক তার বাড়ি থেকেই অত্র এলাকার সর্বপ্রথম কার্যক্রম পরিচালনা করত। (৩) বেতসান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের সময় অস্থায়ীভাবে তাহার বাড়ীতে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
(৪) মা ও শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির কেন্দ্র হিসেবে তাহার বাড়িটি এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে।
এভাবেই তিনি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজে সবসময় সহযোগিতা করতেন তিনি যে কোনো সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশ নিতে সর্বাবস্থায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করতেন।
তিনি জীবমানে এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বে ছিলেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, পাকিস্তান আমলে লালাবাজার হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে এই স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখেন,
এবং বেতসান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ সভাপতির দায়িত্য পালন করেন।
বেতসান্দি হাজী ইয়াসিন উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই সরাসরি সহযোগিতা করতে থাকেন, এবং তখন থেকে বহুদিন পর্যন্ত উক্ত বিদ্যালয় এর কার্যকরী কমিটির সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ছমিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্য পালন করেন।
চিরায়িত নিয়মানুযায়ী তিনি ১৯৫২ ইংরেজী সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখে একাকীত্ব জীবনের অবসান ঘটিয়ে তৎকালিন সময়ের সুপরিচিত স্বনামধন্য সালিশ ব্যক্তিত্ব কামাল বাজার এলাকার নভাগ গ্রামের মোহাম্মদ ওমরাহ চৌধুরী সাহেবের দ্বিত্বীয় মেয়েকে বিয়ে করে যুগল জীবনে পদার্পন করেন । বিবাহিত জীবনে তাহার চার ছেলে এবং পাঁচ মেয়ে রয়েছেন। তাহার প্রত্যেক ছেলে পিতার আদর্শ লালিত করে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সমাজ সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন।
তাহার বড় ছেলে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী এর বড় ছেলে শেফাক চৌধুরী সিলেট জজ কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন।
তাহার ছোট ছেলে আবুল লেইছ ( আবেদ ) চৌধুরী, লন্ডনে থেকেও বাঙ্গালী কমিউনিটি অনেক সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে দেশ ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
একজন আদর্শ ব্যক্তি, সমাজ সচেতন , প্রবীন রাজনীতিবিদ ন্যয়পরায়ন সালিশ ব্যক্তি, সাদা মনের মানুষ হিসাবে সকলের নিকট অতি প্রিয় পরিচিত ছিলেন আব্দুল বারী চৌধুরী।
সুন্দর ও আলোকিত সমাজ বির্ণিমানের স্বপ্নদ্রষ্টা আব্দুল বারী চৌধুরী ৫ ফেব্রæয়ারী ২০১৩ ইংরেজী সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার এই মৃত্যুতে হাজার হাজার শুভাকাংখীগন হারালেন তাহাদের বিপদ-আপদের আশ্রয়স্থল, ন্যায় বিচারের অতন্ত্র প্রহরী, বিশাল জ্ঞান ভান্ডারের অধিকারী, অমায়িক ও সাদা মনের মানুষকে। মহান আল্লাহ যেন তাহার দুনিয়ার জীবনের গুনাহ মাফ করে তাহার সামাজিক খেদমতকে কবুল করে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। আমীন
তথ্যসূত্রে: মুন্সির বাজার সমাজ কল্যান সংস্থা।