Please Share This Post in Your Social Media
ডেস্ক : মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ও দক্ষিণ ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম এবং তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে এক বছর করে কারাদন্ড দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় গতকাল সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটে হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই দুজনকে গ্রেফতারের পর এই দন্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, মদ, বিয়ার ও ওয়াকিটকিসহ বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র্যাব। অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটস রোয়ার আলম।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষীর এই দন্ডের পাশাপাশি দুজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম জানান, চকবাজা রের ২৬ নম্বর দেবীদাস ঘাট লেনের ওই বাড়ির চতুর্থ ও পঞ্চম তলাটি ডুপ্লেক্স সিস্টেমে নির্মাণ করা হয়েছে। ৪র্থ তলার উত্তর কর্ণা রের রুম টিতে বসবাস কর তেন এমপি পুত্র ইরফান সেলিম।
তার রুমের তোশকের নিচে ম্যাগজিন ভর্তি একটি বিদেশী পিস্তল পাওয়া গেছে। এছাড়া ৫ম তলায় পূর্ব পাশের কর্নারে ৫টি ওয়ারল্যাস এবিএস সিস্টেম ও ৪০টি ওয়াকিটকি সেট, একটি হ্যান্ডকাপ, একটি বন্দুক, বিদেশী মদের বোতল ও বিয়ার পাওয়া গেছে। আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো লাইসেন্স নেই। আর ওয়াকিটকিগুলোও অবৈধ, কালো রঙের এসব ওয়াকিটকি শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করতে পারেন।” ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে হেফাজতে নেয় র্যাব।
এদিকে, সাংসদ হাজী সেলিমের গাড়িচালক মীজানুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমান এই অনুমতি দেন।
এর আগে পুলিশ আসামি মিজানুর রহমানকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে তাকে একদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। নৌবাহিনীর কর্মকর্তার দায়ের করা মামলায় মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।
গত রোববার সন্ধ্যার পর রাজধানীর কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে মারধরের শিকার হন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খান। তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় সাংসদের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি। এরপর গাড়িটি থেকে কয়েকজন ব্যক্তি নেমে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সকাল পৌনে আটটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার একটি মামলা হয়। হাজী সেলিমের ছেলেসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন মারধরের শিকার নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খান।
ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) রবিউল ইসলাম জানান, মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন এমপি পুত্র ইরফান সেলিম ও তার হেরক্ষী জাহিদ, গাড়ি চালক মীজানুর রহমান, এ বি সিদ্দিক দীপু ও অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজন ব্যক্তি।
ধানমন্ডি থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল্লাহ জাহিদ বলেন, ওই গাড়ি সাংসদ হাজী সেলিমের। তিনি গাড়িতে ছিলেন না। তাঁর ছেলে ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। পুলিশ সাংসদের গাড়ি ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তার মোটরসাইকেল রাতেই ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তিনি রাস্তায় জটলা থেকে মুঠোফোনে ভিডিও করেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আহত এক ব্যক্তি নিজেকে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ বলে পরিচয় দেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি স্ত্রীসহ মোটরবাইকে ফিরছিলেন। ওই গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। তিনি তখনই মোটরসাইকেল থামান এবং নিজের পরিচয় দেন। গাড়ি থেকে নেমে দুই ব্যক্তি তাকে মারধর করেন।
Related