বিশ্বনাথের লতিফিয়া ইরশাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র রবিউল ইসলাম হত্যাকান্ডের মূল হোতাকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততা নিয়ে এলাকার এক জনপ্রতিনিধির নাম নিয়ে তোলপাড় চলছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক দেবাশীষ শর্মা সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রহমাননগরের হতদরিদ্র আকবর আলীর কনিষ্ঠ পুত্র স্থানীয় লতিফিয়া ইরশাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র রবিউল ইসলামের লাশ গত ১৩ অক্টোবর সকালে স্থানীয় সিঙ্গেরকাছ পাকা রাস্তার দক্ষিণের একটি ডোবা জমি থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আকবর আলী বাদী হয়ে ঐদিনই বিশ্বনাথ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৯। মামলায় করপাড়ার সাদিকুর রহমান (৪০), একই গ্রামের আব্দুল কাদির (৫০) ও মাজেদা বেগমকে (৪০) আসামী করা হয়। এছাড়াও, অজ্ঞাতনামা আরো ৪ জনকে আসামী করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লাশ উদ্ধারের পর পরই এজাহারভুক্ত আসামী মাজেদা বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও ঘটনার কোন রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মাজেদা কারাগারে রয়েছে। তবে মামলার এজাহারভুক্ত অপর ২ আসামীর এখনো কোনো হদিস পায়নি বিশ্বনাথ পুলিশ।
এদিকে, হত্যাকান্ডের পর এলাকার এক জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মানববন্ধন করে ঐ জনপ্রতিনিধিকে দ্রুত গ্রেফতারেরও দাবী জানিয়েছেন। পুরো বিষয়টি পুলিশের নজরে রয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন বাজারে হাঁস-মুরগী ক্রয় করে পুনরায় বিক্রি করে সংসার চালান আকবর আলী। তার ২ পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের মধ্যে রবিউল ছিল কনিষ্ঠ। পড়ালেখার পাশাপাশি রবিউল তার পিতার কাজকর্মেও সহযোগিতা করতো। প্রায় দেড় বছর পূর্বে মাদ্রাসা ছাত্র রবিউল ইসলাম গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায়। এ সময় দেখে স্থানীয় সাদিকুর রহমান দা দিয়ে কুপিয়ে কামরান মিয়ার গরুর পেছনের পা কেটে দেয়। গরুর পা কাঠার বিষয় নিয়ে এলাকার গোয়াহরির গোলাম হোসেন মেম্বারের বাড়ীতে বৈঠক হয়। বৈঠকে সাক্ষী দেয় রবিউল। এর ফলে সাদিকুর ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দেন। এরপর থেকে প্রভাবশালীদের চক্ষুশুলে পরিণত হয় রবিউল।
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, সাক্ষ্য দেয়ার জের ধরে গত ৬ অক্টোবর রবিউলকে একা পেয়ে সাদিকুর ও অন্যরা চপেটাঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে জমিতে ফেলে কয়েক দফা লাথি দেয়। এতে শিশু রবিউল মারাত্মক আহত হয়। এরপর বিষয়টি মীমাংসা করা হলেও তাদের আক্রোশ থেকে রক্ষা পায়নি রবিউল। এর আগেও বেশ কয়েকবার রবিউলকে এই প্রভাবশালীরা মেরে আহত করেছিল। প্রভাবশালী হওয়ায় দরিদ্র আকবর আলী ভয়ে মুখ খুলেননি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১২ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে জমি দেখতে যায় রবিউল। বেলা ১২টার দিকে সাদিকুর ও আব্দুল কাদির রবিউলের নাকে মুখে চাপ দিয়ে বসত ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে বাড়ীর পাশের ঝোপঝাড়ের ভেতরে গলা টিপে হত্যা করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এতে আরো ৪ জন অংশ নেয়। হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখে এবং পরে রাতের আধারে লাশ পানিতে ফেলে দেয়। লাশের মুখে, চোখে, ঠোটে, কানে, অন্ডকোষ, লিঙ্গ ক্ষত ক্ষত সাদা চিহ্ন দেখা যায় বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, কনিষ্ঠ পুত্রকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশেহারা। অত্যন্ত চালাক, চঞ্চল ও মেধাবী রবিউলকে এভাবে হত্যা করা হবে তা কখনো কল্পনাও করেননি তারা। নিহতের পরিবার ও এলাকার লোকজন হত্যাকান্ডের মূল হোতাদের গ্রেফতার ঐ জনপ্রতিনিধিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্যে পুলিশের নিকট দাবী জানিয়েছেন।
মামলার বাদী-নিহতের শোকার্ত পিতা আকবর আলী সিলেটের ডাককে এ সকল তথ্য জানিয়ে তিনি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিশ্বনাথ থানার উপ-পরিদর্শক দেবাশীষ শর্মা সিলেটের ডাককে বলেন, জনপ্রতিনিধির বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘাতকদের গ্রেফতারের জন্যে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।