সিলেট৭১নিউজ :নবীগঞ্জে আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে আলোচিত গৃহবধূ কথিত ধর্ষনের অভিযোগের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। আটককৃত যুবক, কথিত ধর্ষিতা গৃহবধূ ও তার স্বামীকে ত্রিমুখী জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার রাতে আটককৃত সাইফুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানায় ‘ওই মহিলা একজন যৌনকর্মী। তাকে ২ হাজার টাকা চুক্তিতে আনা হয়েছিল। পরে যৌনমিলন শেষে টাকা না দেয়ায় এমন নাটক সাজিয়েছে।’
পুলিশ ও দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের কালাভরপুর গ্রামের ওই গৃহবধুর ইতিপূর্বে চারটি বিয়ে হয়।
পারিবারিক ভাবে পৌর এলাকার গন্ধা গ্রামের এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে দেয়া হয়। অবাধ চলাফেরার কারণে অল্পদিনেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামে ২য় বিয়েরও বিচ্ছেদ ঘটে। একপর্যায়ে সে সকলের অগোচরে উমান চলে যায়। কিছুদিন পর দেশে আসে।
এরপর কুর্শি ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের আমীর মিয়ার সাথে ৩য় বিয়েতে আবদ্ধ হয়। কিছুদিন পর এ বিয়েও ভেঙে যায়। ৪র্থ বিয়ে হয় আজমেরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামের কাশেম মিয়ার সাথে। বর্তমানে সে ওই স্বামীর সাথে রয়েছে।
আলোচিত ঘটনায় পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে কথিত ধর্ষন ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেন এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী ও থানার ওসি আজিজুর রহমান।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামি সাইফুল মিয়া জানায়- ‘ওই মহিলা তাদের সহকর্মী জামিলের পরিচিত। এমনকি এই মহিলা একজন ভাসমান যৌনকর্মী। তারা ৪ জনে যৌনমিলন করার জন্য ২ হাজার টাকা চুক্তিতে ওই মহিলাকে নিয়ে আসেন। তারা মহিলাকে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে শেরপুর থেকে নিয়ে আসেন। আউশকান্দি ইউনিয়ন অফিসের পরিত্যক্ত ভবনে এনে মহিলার সাথে যৌনমিলন করে ৪ খদ্দের। পরে আরো ২ জন আসে। কিন্তু মহিলা তাদের সাথে শারীরিকমিলনে মিলিত হতে রাজি হননি।
মহিলা প্রতিবাদি সুরে জানায় তাকে ২ হাজার টাকায় ৪ জনের কথা বলে আনা হয়েছে। এর বাহিরে আর কারো সাথে যৌনমিলন করতে পারবেনা। এ নিয়ে হঠ্রগোল হয়। অতঃপর খদ্দেররা সারা রাত মহিলার সাথে জোরপূর্বক অনৈতিক শারীরিক মিলনের পর ভোরে মহিলাকে একা ঘরে রেখে টাকা না দিয়েই পালিয়ে যায়। চুক্তির ভিত্তিতে টাকা না দেয়া নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়।
ঘটনা প্রকাশ হয়ে গেলে সৈঈদপুর বাজারের বিভক্ত শ্রমিকদের একটি গ্রুপ ওই মহিলাকে দিয়ে ধর্ষনের নাটক তৈরি করে।
এদিকে, এনিয়ে গৃহবধূকে জিজ্ঞাসাবাদকালে তথ্য প্রমান উপস্থাপনের পর সে সত্যতা স্বীকার করে। এ সময় কথিত ওই গৃহবধুকে তার পারিবারিক জিম্মায় দেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। ওই মহিলা পরিবারের জিম্মায় যেতে অস্বীকার করে তার চতুর্থ স্বামী এবং শাশুড়ির জিম্মায় যেতে চায়।
হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় তাকে চতুর্থ স্বামীর জিম্মায় দেয়া হয়। অপরদিকে, আটক অভিযুক্ত অটোরিকশা (সিএনজি) চালক সাইফুলকে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে তাকে হবিগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রিট আদালতে পাঠানো হয়। এ খবর নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার দাশ। এ ঘটনায় থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
অপর অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য,গত সোমবার রাতভর কথিত ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য নিয়ে নানা নাটকিয়তা দেখা দেয়। এনিয়ে রাতভর গৃহবধূ ও তার স্বামীকে নবীগঞ্জ থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
এক পর্যায়ে ৬জনের নামে থানায় মামলা হয়। এরই ভিত্তিতে ২নং অভিযুক্ত আউশকান্দি ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের সাদিক মিয়ারপুত্র সাইফুলকে প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার রাতে একই ইউনিয়নের মিনহাজপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আলোচিত ঘটনায় হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লার নির্দেশনায় পুলিশের চারটি দল মাঠে সরব হয়। মাঠে থেকে ঘটনার মনিটরিং করেন, নবীগঞ্জ-বাহুবলের সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী এবং নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমান।