সিলেট:: আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে দেশব্যাপী আলোচিত সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আরো তিন আসামী রাজন, রনি ও আইনুল। এ নিয়ে আটক ৮ জনের ৬ জন আদালতে সেদিনকার পৈশাচিকতার বর্ণনা দিয়েছে। আসামী নিজেরা ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
গতকাল শনিবার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের কাছে রাজন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান এর কাছে আইনুদ্দিন ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নীলার কাছে জবানবন্দি দিয়েছে শাহ মাহবুবুর রহমান রনি। অন্যদিকে, মামলার দুই আসামি তারেকুল ইসলাম এবং মাহফুজুর রহমানের ডিএনএ টেস্ট এর জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সিলেট এম এজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে(ওসিসি)।
গতকাল শনিবার বেলা ১টায় কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে আসামীদেরকে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির করে শাহপরান থানা পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে আলোচিত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর এবং রবিউল ইসলামকেও রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সন্ধ্যায় জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর আদালতের নির্দেশে তাদেরকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।
অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর এই ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে একাধিক আসামি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সেদিনকার পৈশাচিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। একাধিক আসামী তাদের বক্তব্যে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে প্রাইভেটকারের ভেতরে সেই গৃহবধূকে একাধিকবার পাশবিক নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে। এরপর আলামত নষ্ট করারও চেষ্টা করেছিল তারা। তবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতির ফলে-সেটা সম্ভব হয়নি বলেও জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র।
শুক্রবার রাতে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর বলে, প্রাইভেট কারটি এম সি কলেজের প্রধান ফটক মোড়ে দাঁড়িয়েছিল, সেখান থেকে তারেক কারটি চালিয়ে ছাত্রাবাসে নিয়ে আসে। এ সময় সাইফুর ও অর্জুন গাড়িতে ছিল। পরে মোটরসাইকেল চালিয়ে শাহ রনি তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। গাড়িতে তারা তরুণীকে নিয়ে নানা রকম খিস্তি করেন। গাড়িটি নিয়ে তারা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ১০৫ নম্বর কক্ষের সামনে আসে। স্বামীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সেখানেই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। ১০৫ নম্বর কক্ষটি মাহফুজুর রহমানের (এজাহারে ৬ নম্বর আসামি) নামে বরাদ্দ থাকলেও কক্ষটি ব্যবহার করতো সাইফুর। কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া পাইপগানসহ অস্ত্রগুলো তার ছিল বলে জবানবন্দিতে বলেছে।
অপর আসামি রবিউল জবানবন্দিতে বলেছে, সে ধর্ষণ করেনি ; তবে ধর্ষকদের সহযোগিতা করেছে। রবিউল ঘটনার দিন কারা কারা ছিলো সব বলেছে। অর্জুন লস্করও দায় স্বীকার করে বক্তব্যে সেদিনকার পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়।
তারেক ও মাহফুজের ডিএনএ সংগ্রহ: সিলেটের এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তারেক আহমদ ও মাহফুজুর রহমান মাছুমের ডিএনএ-এর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ পাহারায় তাদের সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার(ওসিসি)-এ তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
ওসমানী হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই ফারুক আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহের পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদেরকে নিয়ে যায় পুলিশ।
এর আগে, বৃহস্পতিবার বাকি ছয় আসামি সাইফুর, অর্জুন, রবিউল, রনি, রাজন ও আইনুদ্দিনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয় ওই হাসপাতালে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজের ফটকের সামনে বেড়াতে যাওয়া এক তরুণী ও তার স্বামীকে জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে এমসি কলেজের ছাত্রলীগের কয়েক কর্মী। এ ঘটনায় সেদিন রাতেই ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে সিলেটের শাহপরান থানায় ছয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত তিনজনকে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলো- এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান, কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন লস্কর, বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল এবং তারেক আহমদ। এরা সকলেই টিলাগড়ের রনজিত গ্রুপের কর্মী। মামলার অপর তিন আসামি অজ্ঞাত। এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করে পাঁচদিন করে প্রত্যেককে রিমান্ডে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।