করোনা মহামারির কারণে বিদেশ ফেরত সিলেটের প্রায় ৫ হাজার প্রবাসী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে সহায়তার আবেদন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এই প্রবাসীদের সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের নির্দেশনার পর আবেদন গ্রহণ করা হলেও এখনো কেউ সহায়তা পাননি।
সিলেট জেলা জনশক্তি অফিস জানিয়েছে, আবেদন গ্রহণের নির্দেশ এসেছে, কিভাবে সহায়তা দেয়া হবে সে ব্যাপারে এখনো কোন নির্দেশ আসেনি।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রবাস থেকে দেশে এসে আটকে পড়া অনেক প্রবাসী এখন চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যে আছেন। করোনার কারণে লকডাউনের পর ৬/৭ মাস অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় অনেকেই ঋণ করে পরিবার চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। সহায়তার পাশাপাশি তাদের কাজে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য তারা সরকারের প্রতি আহবান জানান।
জানা যায়, করোনা মহামারি শুরুর পূর্বে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির দিকে অনেক প্রবাসী দেশে এসেছিলেন। তারা ফিরে যাওয়ার আগেই করোনার মহামারিতে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর ফিরে যেতে পারেন নি। আবার অনেকে করোনা কালেও চাকুরী হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। সরকার প্রবাসীদের সহায়তার জন্য আবেদনের জন্য বললে জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিসে আবেদন করতে শুরু করেন তারা। এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। সিলেট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে প্রায় ৫ হাজার প্রবাসী আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, সিলেট কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকে জানা যায়, সিলেট অফিস থেকে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মৌলভীবাজারে জনশক্তি অফিস থাকায় সেখানে সেই অফিস থেকে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
দীর্ঘদিন থেকে দেশে থাকায় প্রবাসীরা চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে আছেন। প্রবাস থেকে ফেরার সময় সঙ্গে আনা টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকে ঋণ-ধার করে চলছেন বলে জানান। আর্থিক অনটনের কারণে সামাজিকভাবেও অনেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বলে জানান। এতে শারীরিক ও মানসিকভাবেও অনেকে ভেঙ্গে পড়েছেন বলে জানান তারা।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ফরিদ মিয়া জানান, গত জানুয়ারীতে তিনি দুবাই থেকে দেশে এসেছিলেন। এরপর ফিরে যাওয়ার পূর্বেই করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি দেশে আটকা পড়েন। এখন পর্যন্ত তিনি যাওয়ার ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা পাননি। কফিলের সাথে যোগাযোগ করেছেন কিন্তু তিনিও নির্দিষ্টভাবে তাকে কিছু বলেননি। তিনি সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন জানিয়ে জানান, আটকে পড়া প্রবাসীদের কষ্ট ব্যাখ্যা করার মতো নয়। আর্থিক, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রবাসীরা কষ্টের মধ্যে আছেন। প্রায় কপর্দকশূন্য জানিয়ে তিনি বলেন, একটি টাকারও আয় নেই। কিন্তু একসময় আমিই মানুষকে সহায়তা করেছি। এখন নিজেকেই ঋণ করে চলতে হচ্ছে।
ওসামানীনগরের শামীম আহমদ জানান, তিনি কাতার থেকে গত জানুয়ারিতে এসে আর ফিরে যেতে পারেন নি। খুব ভালো চাকুরী করতেন। আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে বেশ ভালো অবস্থানে ছিলেন। কফিলের সাথে যোগাযোগ করেছেন। কফিল জানিয়েছেন তিনি আবেদন করছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন খবর পাননি। আর্থিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে জানান, পরিবারের ভরণপোষণ করাই এখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ পরিবার কিভাবে চলবে সেই ব্যাপারে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। সামাজিক অবস্থানের কারণে সবাইকে সব কথা বলাও যায়না বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের কাতার ফেরত আব্দুল হাই হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, কোন আয় নেই, কিন্তু না খেয়েতো থাকা যায় না। ইতোমধ্যে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মতো ঋণ করেছেন। ফিরে গেলে টাকা ফেরত দিব বলে আত্নীয়স্বজন থেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এভাবে কতদিন চলা যায় বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি। সরকারি সহায়তা পেলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতো বলে জানান তিনি।
জেলা জনশক্তি অফিসে প্রবাসীদের সহায়তার আবেদন এখনো গ্রহণ করা হচ্ছে। নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বরসহ বিভিন্ন প্রমাণপত্রসহ আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে সহায়তার ব্যাপারে তারা কিছু বলতে পারছেন না।
সিলেট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহাকারী পরিচালক মীর কামরুল হোসেন বলেন, প্রবাসীদের থেকে আবেদন গ্রহণ করতে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেইভাবেই তারা আবেদন গ্রহণ করছেন। কিভাবে-কী সহায়তা দেওয়া হবে সে ব্যাপরে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের সহায়তার ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি। কোন নির্দেশনা পেলে সে ভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।