বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালেও থেমে নেই সড়কে মৃত্যু। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক কাটিয়ে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির সংখ্যা যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
এতে ঝরছে অসংখ্য প্রাণ।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক-মহাসড়কের ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক, মানুষের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দুর্বলতাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমছে না।
যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, বিআরটিএ-এর সক্ষমতার ঘাটতি সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ছয় মাসে এক হাজার ৫০৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় এক হাজার ৯৫৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৫৯৮ জন।
তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, গত ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সড়কে টানা ৬৬ দিন গণপরিবহন একেবারেই বন্ধ ছিল। ১ জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সড়কে সীমিত পরিসরে পরিবহন চলেছে। সাধারণ ছুটির সময় সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহত তুলনামূলক কমলেও ছুটি শেষে দুর্ঘটনা আবার বেড়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, ২৪ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটির সঙ্গে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২৭ জনের মৃত্যু হয়।
এপ্রিলজুড়ে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে পুরোপুরি বাস-গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। তারপরও ১১৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হন ১৩৮ জন। মে মাসেও সাধারণ ছুটি অব্যাহত থাকায় সড়ক ছিল অনেকটা ফাঁকা। তারপরও মে মাসে ২১৩টি দুর্ঘটনায় ২৯২ জনের মৃত্যু হয়।
১ জুন থেকে দেশে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। ফলে জুন থেকে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার আগের মতো বেড়ে যায়। জুনে ২৯৭টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৩৬১ জনের।
একই ধারা অব্যাহত থাকে জুলাইয়েও। ওই মাসে ২৯৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৩৫৬ জন। সর্বশেষ আগস্টে ৩০২টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৭৯ জনের। অর্থাৎ এ তিন মাসে দুর্ঘটনা যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে বেড়েছে মৃত্যুও।
এ বিষয়ে কথা হয় পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. শিফুন নেওয়াজের সঙ্গে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। এছাড়া দক্ষ চালকের অভাবকে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দক্ষ চালক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। নির্দিষ্ট হওয়া উচিত পরিবহন শ্রমিকদের বেতন এবং কর্মঘণ্টা।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গুণগত মহাসড়ক নির্মাণসহ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর সুষ্ঠু প্রয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের এ সহকারী অধ্যাপক।