সিলেট :: সিলেটে গত কয়েক মাসে তিন দফা বন্যায় সিলেট বিভাগে পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু স্থানে পানি নামতে শুরু করেছে, অনেক স্থানে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)-এর বন্যা সেল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডিপিই সূত্র জানায়, বন্যায় সারাদেশের ছয়টি বিভাগে মোট তিন হাজার ৯০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে কোনোটি পানিবন্দি অবস্থায়, কোনোটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কোনোটি আবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জানা গেছে- সিলেট বিভাগে ৫৮২টি, ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৪৬০টি, রাজশাহী বিভাগে ৭৫০টি, রংপুর বিভাগের ৬৬৫টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬৮টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৫০০টি। এবার প্রায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান বন্যার কবলে পড়লো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক আবার কোনোটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক স্থানে স্কুলের মেঝে ডুবে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে স্কুলে ঢোকার পথের রাস্তাও।
ডিপিই’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, প্রাথমিকভাবে সারাদেশে বন্যাকবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৯০৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য মিলেছে। এখনো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে কোনো কোনো জেলার বন্যাকবলিত স্কুল থেকে পানি নেমে যাচ্ছে, অনেক স্থানে এখনো পানিবন্দি, কিছু প্রতিষ্ঠান আবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে।
তিনি জানান, অধিদফতর থেকে একটি সেল তৈরি করে সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন যে জেলা থেকে তথ্য আসছে সেগুলো আপডেট করা হচ্ছে।
নুরুল আমিন আরও বলেন, দেশের যে জেলার পানি নেমে যাবে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর সংস্কারকাজ শুরু করা হবে। যেসব স্থানে নদীগর্ভে বিদ্যালয় বিলীন হয়েছে সেখানে সুবিধামতো স্থানে নতুনভাবে বিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে। বন্যাকবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। পানি নেমে গেলে সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।
ডিপিই’র এক কর্মকর্তা জানান, উল্লিখিতসংখ্যক প্রতিষ্ঠান মেরামত, সংস্কার এবং ক্ষেত্রবিশেষে নতুন ভবন নির্মাণে অন্তত ৮০ কোটি টাকা লাগতে পারে। এটা প্রাথমিক হিসাব। পরিপূর্ণ হিসাব তৈরি করতে আরও মাসখানেক সময় লাগতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যায় একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কোনো ছাত্রছাত্রীর বইপত্র নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাকে নতুন বই দেয়া হবে। জেলায় বাফার স্টকে চাহিদার ৫ শতাংশ বই সংরক্ষিত আছে। যদি কোনো জেলায় তাতেও চাহিদা পূরণ না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী জেলা বা ঢাকা থেকে ব্যবস্থা করা হবে।