সিলেট : গ্রাহকের চেক জালিয়াতি করে ৭ হাজার টাকার স্থলে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দাবী করে মামলা করায় অগ্রণী ব্যাংক, হেতিমগঞ্জ শাখার ৪ কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। ওই ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে গ্রাহকের দাখিল করা আবেদন অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সিলেটের স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) বজলুর রহমান গত ১৮ আগস্ট ২০২০ ইং তারিখে এ আদেশ প্রদান করেন।
মামলার আপীলকারী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক আহমদ জানান, গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জ বাজারস্থ হক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী, গোলাপগঞ্জ উপজেলার কতোয়ালপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত শফিকুল হকের ছেলে আব্দুল আজিজ অগ্রণী ব্যাংক, হেতিমগঞ্জ শাখা থেকে ২০১০ সালে ২ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে আব্দুল আজিজ উক্ত টাকা ২০টি কিস্তিুতে নগদে পরিশোধ করে দেন। কিন্তু, ব্যাংকে ঋণের বিপরীতে জমা থাকা ৭ হাজার টাকার একটি চেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জালিয়াতি করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা লিখে প্রত্যাখ্যান করিয়ে ১৭ জুলাই ২০১৪ ইং তারিখে আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
ঐ মামলা দীর্ঘ দিন চলার পর সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতের বিচারক মাসুদ করিম আসামী আব্দুল আজিজকে দোষী সাব্যস্ত করে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আব্দুল আজিজ সিলেটের জেলা জজ আদালতে আপীল করেন। আপীল মামলাটি বিচারের জন্য সিলেটের অতিরিক্ত জেলা জজ ৩য় আদালতে স্থানান্তরিত হয়।
তিনি আরও জানান, আদালতে বিচার চলাকালে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামলার শুনানীকালে অগ্রণী ব্যাংক, হেতিমগঞ্জ শাখা কর্তৃক গ্রাহক আব্দুল আজিজের জমাকৃত সিকিউরিটি চেক জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আসামী আপীলকারীর পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট রফিক আহমদ। দেখা যায়, আব্দুল আজিজ ঋণ গ্রহণকালে সিকিউরিটি হিসেবে কয়েকটি চেক জমা দিয়েছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু, আব্দুল আজিজ প্রতি মাসে ডিপোসিট স্লিপের মাধ্যমে ২০টি কিস্তিুতে ঐ ঋণের পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে দেন। কিন্তু, আব্দুল আজিজের জমা দেয়া ৭ হাজার টাকার একটি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার চেকে রূপান্তর করে আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে চেক ডিজঅনার মামলা দায়ের করে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আপীল মামলা চলাকালে ২য় দফায় আবারো জালিয়াতির আশ্রয় নেন অগ্রণী ব্যাংক, হেতিমগঞ্জ শাখার কর্তৃপক্ষ। তারা ঐ গ্রাহকের একাউন্টে ১ লাখ টাকা জমা দিয়ে কোর্টের কাছে দাবী করেন, গ্রাহক ১ লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছেন, তাদের বকেয়া পাওনা ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে দিলে আপীল নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এ সময় আসামী আপীলকারীর আইনজীবী এডভোকেট রফিক আহমদ চ্যালেঞ্জ করে বলেন, রায়ের পর আসামী কোন টাকা দেননি বা আসামীর কাছে ব্যাংকের কোন পাওনাও নেই। ফলে, আদালত ঐ ১ লাখ টাকার জমাস্লিপ প্রদর্শণের জন্য নির্দেশ দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু, ঐ ডিপোজিট স্লিপ নিয়ে আর আদালতে আসেননি অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ফলে, আদালত আসামী আব্দুল আজিজকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করেন।
ইতোমধ্যে আপীলকারী আব্দুল আজিজের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক আহমদ জালিয়াতির সাথে জড়িত অগ্রণী ব্যাংকের ৪ কর্মকর্তা, যথা- হেতিমগঞ্জ শাখার সিনিয়র অফিসার কামরুল হাসান, অফিসার হিরন্ময় দাস, প্রিন্সিপাল অফিসার মোঃ ফরিদ উদ্দিন এবং উপ মহাব্যবস্থাপক ও অঞ্চল প্রধান মোঃ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান। সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ, ৩য় আদালতের বিচারক মোছাম্মৎ রোকশানা বেগম হ্যাপি তার আবেদনটি মঞ্জুর করেন এবং চেক জালিয়াতির সাথে জড়িত অগ্রণী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেটের চীফ জুডিয়াসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এই নির্দেশনাটি সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১ম আদালতে প্রেরণ করেন। ব্যাংক কর্মকতাদের এই জালিয়াতির ঘটনা দন্ডবিধির ৪৬৫ ও ৪৬৭ ধারার অপরাধ এবং দুদকের এখতিয়ারভূক্ত হওয়ায় আবেদনটি প্রেরণ করা হয় স্পেশাল জজ আদালতে। এর প্রেক্ষিতে সিলেটের স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) বজলুর রহমান গত ১৮ আগস্ট আদালত এক আদেশে অগ্রণী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত আবেদনটি অভিযোগ হিসেবে গণ্য করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
আপীলকারী আব্দুল আজিজের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক আহমদ বলেন, ব্যাংক কর্তৃক সিকিউরিটি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহককে হয়রানীর ঘটনা অহরহ ঘটছে। অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেশের বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা।
তিনি যথাযথ ন্যায় বিচার করায় আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।