শাবিপ্রবিঃ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহায়ক/সাধারণ কর্মচারী পদের জন্য দরখাস্ত ফরমে স্টোর কিপার পদে ভুয়া সনদ সংযুক্ত করে আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দপ্তর শাখার সহকারী প্রশাসনীক কর্মকর্তা মুহিবুর রহমানের স্ত্রী ইসরাত জাহান।
২০১৯ সালের ১৫ই এপ্রিল এ পদে বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় সনদপত্র সহ আবেদন করেন তিনি। নিয়োগের ভিত্তিতে ইসরাত জাহান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের স্টোর কিপার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।
কিন্তু সনদ যাচাইকরণে বেড়িয়ে আসে ভুয়া সনদ ব্যবহার করে চাকুরীতে আবেদন করেন এই ইসরাত জাহান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্নসূত্রে জানা যায়, ইসরাত জাহান, স্বামী মুহিবুর রহমান (বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবদপ্তর শাখার বর্তমান সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা), ঠিকানা ২৩/২এ নূরানী আবাসিক এলাকা, সুবিদবাজার, সিলেট কর্তৃক স্টোর কিপার পদে আবেদন করেন। তার অন্যসব সনদের বৈধতা মিললেও বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক যে অভিজ্ঞতা সনদ চাওয়া হয় সেটায় ব্যবহার করেছেন মৌলভীবাজার পৌরমেয়রের স্বাক্ষর নকল করে নিজে বানানো জাল সনদ।
চাকরীর আবেদন পত্রে যেখানে অভিজ্ঞতা সনদপত্র সংযুক্ত করার বিধি রয়েছে সেখানে প্রার্থী অভিজ্ঞতা সনদ সংযুক্ত উল্লেখ করলেও যুক্ত করে দেয় মৌলভীবাজার পৌরসভার একটি ভুয়া সনদ। যেখানে তিনি তার অভিজ্ঞতাস্বরুপ উল্লেখ করেন মৌলভীবাজার পৌরসভায় স্টোরকিপার পদে কর্মরত ছিলেন পাঁচ বছর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এমন তথ্য যাচাইকরার চেষ্টাকালে বেড়িয়ে আসে তার ভুয়া সনদের রহস্য।
তার ব্যবহৃত ভুয়া সনদের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, মৌলভীবাজার পৌরমেয়র ফয়জুল করিম স্বাক্ষরিত স্মারক নং বিহীন এক পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, মৌলভীবাজার পৌরসভায় গত ০১লা জুলাই ২০০৮ ইং হতে ৩০জুন ২০১৩ পর্যন্ত স্টোরকিপার পদে কর্মরত ছিলেন এই ইসরাত জাহান।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তর হতে পাঠানো যাচাইপত্রে এমন তথ্য ভুয়া বলে ফিরতি পত্র পাঠান মৌলভীবাজার পৌরসভার বর্তমান মেয়র ফজলুর রহমান। বর্তমান পৌরমেয়র স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় এই নামে কোনো ব্যক্তি উক্ত পৌরসভায় কোনো পদে কর্মকরত ছিলেন না।
বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতী চক্রকে ধরতে সক্ষম হয়েছে শাবিপ্রবি। দিয়েছে শাস্তিও । এবার তেমনি জালিয়াতি করেছে স্টোর কিপার পদে আবেদন করা হিসাবদপ্তর শাখার সহ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুহিবুর রহমান খানের স্ত্রী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্টোর কিপার ইসরাত জাহানের সাথে ফোনে কথা বললে তিনি জানান, এ বছরের জানুয়ারিতে চাকরীতে যোগদান করেছেন তিনি। তবে বর্তমানে মাতৃকালীন ছুটিতে আছেন। এছাড়া ভুয়া সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে মুখ খুলতে চান নি তিনি।
স্টোর কিপার ইসরাত জাহানের এমন জালিয়াতিতে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা তা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিজের স্ত্রী ছাড়াও আরও একাধীক নিয়োগে এমন ভুয়া সনদ ব্যবস্থাপনায় হিসাবদপ্তরের সহ-প্রশাসনীক কর্মকর্তা মুহিবুর রহমান সহায়তা করেছে বলে গোপনসূত্রে জানা যায়।
এছাড়াও একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে আরেক কর্মকর্তার নামে। যিনি নিজের শালিকাকে জাল সনদের মাধ্যমে সহায়তা করেছেন বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় বিধি লঙ্গন করে বহিরাগত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাব্যবস্থা চালিয়ে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে শাবিপ্রবির গ্রন্থাগার দপ্তরের জামায়াত পন্থী কর্মকর্তা সহকারী গ্রন্থাগার কাউছার আহমেদ ও ডেপুটি গ্রন্থাগার মতিউর রহমান খান।