সিলেট:: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে গণপরিবহন চালানোর সুযোগ দিলেও সিলেটের পরিবহন খাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। মাস্ক-এর ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার ন্যূনতম তাগাদা নেই পরিবহন খাতে। বাসে গাদাগাদি করে মানুষ যাচ্ছেন, কোথাও আসন না পেয়ে অনেককে দাঁড়িয়ে যেতেও দেখা গেছে। সিএনজি অটোরিক্সাতে উঠার জন্য চলে ধাক্কাধাক্কি-প্রতিযোগিতা। এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা চরম উদাসীন বলে অভিযোগ যাত্রীদের । একজন যাত্রী বললেন, ‘গণপরিবহনে যাত্রী না থাকলে বিধি, থাকলে কিছুই নেই’। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বাসে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা আরো কঠিন এবং এক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন তারা। তাই সরকারের নিকট পরিবহনে পূর্বের ভাড়া ও নিয়ম কার্যকরের অনুরোধ জানান তারা।
জানা যায়, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সবকিছুর সাথে গণপরিবহনও বন্ধ করে দেয়। গত ১ জুন থেকে সরকার বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাশাপাশি দুটি আসনের একটি খালি রেখে যাত্রী বসানোর কথা। পাশাপাশি প্রত্যেক যাত্রীর মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং গাড়িতে স্যানিটাইজার রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। গাড়ির মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেয়া যাবে না সহ বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। এর ফলে যাত্রী কম তোলা যাবে বলে পরিবহনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাড়া বাড়ানো হয় ৬০ ভাগ।
তবে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। বাসগুলোতে মানুষ ইচ্ছেমতো উঠছেন। কোন কোন বাসের একটি সিটও খালি নেই। কোন কোনটিতে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষকে যেতে দেখা যায়। একটি বাসের ১৮ জন যাত্রীর মধ্যে একজনকেও পাওয়া যায়নি যিনি মাস্ক ব্যবহার করেছেন। সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি তো আলোচনাই নিষ্প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ব্যাংক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, গণপরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন লক্ষণই নেই। যতক্ষণ যাত্রী কম থাকে ততক্ষণ স্বাস্থ্যবিধি, যাত্রী বাড়লে কোন কিছুই নেই। বাসের ড্রাইভার-সহকারী যাত্রীদের নিষেধ করেন না। কিন্তু ভাড়া ঠিকই অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, বাস বা সিএনজি অটোরিক্সাতে স্বাস্থ্যবিধি না মানাই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যবিধির কথা বললেই বরং বাঁকা চোখের দৃষ্টি আর নানা মন্তব্য শুনতে হয় পাশের যাত্রী বা বাসের সহকারীর কাছ থেকে। সিটে বসার পর অন্য যাত্রীরা এসে পাশে বসে যান। তাদের বললেও রাগ করেন। কথা বলাটাই এখন একটি বিড়ম্বনা হয়ে দঁড়িয়েছে।
এদিকে, নগরীর ভেতরের বিভিন্ন পয়েন্টেও এইভাবে যাত্রীদের গাড়িতে উঠতে যেন প্রতিযোগিতা করতে দেখা যায়। বন্দরবাজার, আম্বরখানা, টিলাগড়, সুরমা পয়েন্ট, মদিনা মার্কেট সবগুলো পয়েন্টেই মানুষ দলবেঁধে গাড়িতে উঠছেন। ব্যস্ত সময়ে মানুষ দলবেঁধে ধাক্কাধাক্কি করে গাড়িতে উঠছেন; কোন একটি সিএনজি আসলে ঘিরে ধরছেন যাত্রীরা। বন্দর পয়েন্টে একটি সিএনজি অটোরিক্সাতে পুরো ৫ জনই উঠেছেন। চালককে জিজ্ঞাসা করে কোন জবাব পাওয়া গেলো না। এক যাত্রীকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নাম না জানিয়ে সহাস্যে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি, বুঝি। কিন্তু ব্যস্ততা, পরিবহন সংকট, যাত্রীদের চাপে এসব মানা হয় না। চালকরাও নিষেধ করেন না। তারা না করলে তো আর উঠতাম না।’
গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীনতার বিষয়ে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও জকিগঞ্জ মিনিবাস-মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মার্কেট, বাজার, অফিস এমনকি মসজিদেও নেই স্বাস্থ্যবিধি। এই অবস্থায় বাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আরো কঠিন। কেউ কথা শুনেন না।
তিনি বলেন, কোথাও গাড়ি থামলে মানুষ জোর করেই উঠে যাচ্ছেন। আবার মাস্ক ব্যবহারের কথা বললে বা গাড়িতে উঠার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির কথা বললে অনেক যাত্রী রাগান্বিত হয়ে উঠেন। অনেক সময় যাত্রীদের সাথে গাড়িতে উঠা বা ভাড়া নিয়ে তাদের বচসা করতে হয়।
এই অবস্থায় গাড়ির মালিক, চালক ও সহকারীরাও নানা বিড়ম্বনায় আছেন উল্লেখ করে তিনি সরকারের নিকট অনুরোধ জানান এই ব্যবস্থা উঠিয়ে নিয়ে পূর্বের ভাড়া ও নিয়ম যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।
এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় প্রশাসনের উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম মাহফুজুর রহমান জানান, তারা স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কেন্দ্রীয়ভাবে তাদেরকে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে বারণ করা হয়েছে। এ কারণে এ বিভাগের কোন কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চাননি।