ড. এ.টি.এম. মাহবুব-ই-ইলাহী:: আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে যুগে যুগে নবী রাসুলগণের উপর যত শরীয়ত নাজিল হয়েছে তার সকল শরীয়তেই কোরবানীর হুকুম ছিল। এটা ছিল একটা অপরিহার্য ইবাদত। বর্তমানে দুনিয়ার সর্বত্র মুসলমানেরা যে কোরবানী করেন এবং তার ফলে উৎসর্গের যে দৃশ্য পরিলক্ষিত হয় তা প্রকৃতপক্ষে হজরত ইসমাইল (আঃ) এর ফিদিয়া। হজরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পুত্রের উৎসর্গের যে তিতিক্ষা সংঘটিত করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা প্রতি বছর জিলহজ্জ মাসের ১০ হতে ১২ তারিখ পর্যন্ত এ উৎসর্গের স্মরণে আল্লাহর নামে পশু কোরবানী দিয়ে থাকি।
কোরবানীর পশু জবেহ এবং চামড়া ছাড়ানো পদ্ধতি: কোরবানীর পশু জবেহ করার জন্য পশুকে এমনভাবে শোয়াতে হবে যেন তা কিবলামুখী হয়। যথাসম্ভব কোরবানীর পশু নিজে জবেহ করবেন। কোন কারণে নিজে জবেহ করতে না পারলে পশুর নিকট দাঁড়িয়ে থাকবেন। বড় পশুর মধ্যে গরু, মহিষ কিংবা উট এবং ছোট পশুর মধ্যে ছাগল, দুম্বা কিংবা ভেড়া কোরবানীর পশু হিসেবে নির্ধারিত।
কোরবানীর পশুকে পুর্বের দিন দানার কিংবা ঘাস জাতীয় খাদ্য কম খাওনো। কোরবানীর দিন পশুকে দানার কিংবা ঘাস জাতীয় খাদ্য না খাওনো। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করানো। জবেহের পূর্বে গোছল করানো এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা। পশুকে শোয়ানোর সময় কষ্ট না দেয়া এবং মানবিক আচরন করা। পশুকে জবেহের জন্য ধারালো ছুরি ব্যবহার করা। জবেহের সময় “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলা। এছাড়াও নিম্নলিখিত দোয়াও পড়া যেতে পারে-“ইন্নি ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ হিয়া লিল্লাজি ফাতারাসসামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ আ’লা মিল্লাতি ইব্রাহীমা হানিফাওউ ওয়ামা আনা মিনাল মুসরিকিন, ইন্নাছসালাতি ওয়া নুছুকি ওয়া মাহ্ইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন। লা শারিক কালাহু ওয়াবি জালিকা ওমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন আল্লাহুম্মা লাকা ওয়া মিনকা। অর্থঃ আমি সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ইব্রাহীমের তরিকার উপরে একনিষ্ঠ হয়ে ঐ আল্লাহর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করছি যিনি আসমান জমিন পয়দা করেছেন এবং আমি কখনো শিরককারীদের মধ্যে নই। আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলআমিন এর জন্য। তাঁর কোন শরিক নেই, আমাকে তারই নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং আমি সকলের আগে তাঁর অনুগত ও ফর্মাবরদার। হে আল্লাহ এ তোমারই জন্য পেশ করা হচ্ছে এবং এ তোমারই দেয়া (মেশকাত)।
জবেহের স্থানে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুইটি বড় শিরা (জুগুলার ভেইন) কাটা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হবেন। অযথা এর চেয়ে বেশী না কাটার চেষ্টা করা যেমন- অনেকে জবেহের পর দ্রæত নিস্তেজ হওয়ার জন্য গলার হাড়ের মধ্যে ধারালো ছুড়ি দিয়ে খোঁচাতে থাকে। এটা খুবই অন্যায় ও অমানবিক। এতে পশুর অপমৃত্যু হতে পারে।
অনেক সময় প্রফেসশনাল কসাইরা ধারালো ছুড়ি দিয়ে বুকের মধ্যে হৃদপিন্ডে আঘাত করে পশুকে দ্রুত নিস্তেজ করতে চায়। এটাও অন্যায় ও অমানবিক এবং পশুর শরীর থেকে সম্পুর্ন রক্ত বের হতে বাঁধা প্রদান করে। পশু যতটা পা এবং শরীর নাড়াচাড়া করবে তাতে শরীর থেকে সম্পুর্ন রক্ত বের হতে সহায়ক হবে যেটা অত্যন্ত স্বাস্থ্য সম্মত। জবেহের পর সম্পুর্ন নিস্তেজ না হওয়া পর্যন্ত চামড়া না ছাড়ানো, অন্ততঃ ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করা।
চামড়া ছাড়ানোর সময় চামড়া যাতে কেটে ছিড়ে না যায় সে দিকে লক্ষ রাখা। ধারালো ছুড়ি ব্যবহার না করে কিছুটা ভোতা ছুড়ি ব্যবহার করা ভালো। রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য যথাস্থানে ফেলে দেয়া। কোরবানী মাংস কাটার জায়গা পরবর্তীতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং ব্লিচিং পাউডার কিংবা পটাশ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা। সঠিক পদ্ধতিতে কোরবানীর গোস্ত বন্টন করা।
লেখক: অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।