বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৪৩তম বিমানসেনা দলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ গতকাল সোমবার মৌলভীবাজারের শমশেরনগরে অবস্থিত রিক্রুটস্ ট্রেনিং (আরটিএস) এ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ এবং আকর্ষণীয় মার্চপাস্টের অভিবাদন গ্রহণ করেন। এরপর তিনি কৃতি রিক্রুটদের মাঝে ট্রফি বিতরণ করেন।
এ কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে মোট ৬২০ জন রিক্রুট বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলেন। তাদের মধ্যে এসি-২ অতুল চরন সিংহ এবং এসি-২ এস. এম. রায়হান যথাক্রমে শিক্ষা ও জেনারেল সার্ভিস ট্রেনিং এ সেরা রিক্রুট বিবেচিত হন। এসি-২ জাহিদ হাসান অনিক, সার্বিক বিষয়ে নৈপুণ্যের জন্য শ্রেষ্ঠ রিক্রুট বিবেচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এবং শ্রেষ্ঠ রিক্রুটস ট্রফি লাভ করেন।
এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল এম আবুল বাশার তাকে স্বাগত জানান। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং রিক্রুটদের অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল তার বক্তব্যে সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে দেশ গড়া ও দেশরক্ষার কাজে অংশ নেয়ার জন্য নবীন বিমানসেনাদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, আজ থেকে আপনারা ‘বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত’ এই শপথে দৃপ্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গর্বিত বিমানসেনা। এই দিনটি আপনাদের জন্য বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ যা আপনাদের জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ও সার্জেন্ট জহুরুল হকের অনুগামী হিসেবে সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠায় অবিচল থেকে দেশ গড়া ও দেশ রক্ষায় আপনারা নিজেদের উত্সর্গ করবেন এ প্রত্যাশা সমগ্র দেশবাসীর।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ৩ আগস্ট বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহিরুল থেকে মীেলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানাধীন শমশেরনগরে স্থানান্তরিত হয়। এই এলাকাটির গৌরবময় ঐতিহাসিক তাত্পর্য রয়েছে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনী এখানে একটি ঘাঁটি স্থাপন করে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাফেজখানা প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী মিত্রবাহিনীর ৮টি বিভিন্ন ইউনিট, স্কোয়াড্রন এবং ডিটাচমেন্ট এখানে স্থাপন করা হয়। সে সময়ের এই ব্যস্ততম বিমান ঘাঁটি থেকে ৪৫৩টি ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান পরিচালিত হয়।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট শমশেরনগরে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে। রিক্রুটস্ ট্রেনিং স্কুল এখানে স্থানান্তরিত হওয়ায় শমশেরনগরের গুরুত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চমানের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে রিক্রুটস্ ট্রেনিং স্কুল বিমান বাহিনীর মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এর প্রশিক্ষণ সূচিতে এসেছে নানা পরিবর্তন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান প্রতি এন্ট্রিতে ৭৫০ জন রিক্রুটকে প্রশিক্ষণ প্রদানে সক্ষম। এখানে একই সাথে চলে বিভিন্ন সামরিক ও শিক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ। নিরবচ্ছিন্ন শ্রম, মেধা আর কঠোর সাধনার ফসল হিসেবে গত ৪০ বছরে ৪২টি এন্ট্রিতে মোট ১৫ হাজার ৪৭ জন বিমানসেনা এই প্রতিষ্ঠান হতে সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দক্ষ জনশক্তিতে। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার ‘২০৩০ ফোর্সেস গোল্ড’ এই কর্মসূচীর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়ন করে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের জলসীমা স্থলভাগের চেয়ে বেশি। এজন্য নৌবাহিনীকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। একইভাবে আকাশ নিরাপদ রাখতে বিমান বাহিনী এবং স্থলভাগের নিরাপত্তার জন্য সেনা বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর কার্যক্রম চলছে।