মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির সবকটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে ১২ বছর কারাদণ্ড ও ২১০ মিলিয়ন (২১ কোটি) রিংগিত জরিমানা করেছে। ২৮ জুলাই নাজিবের বিরুদ্ধে আনা ৭ অভিযোগের প্রত্যেকটিতেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় দেন।
কুয়ালালামপুর হাইকোর্টের বিচারক মো. নাজিম মোহাম্মদ গাজ্জালি মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, মামলার সব তথ্যপ্রমাণ বিচার করে দেখা গেছে, প্রসিকিউশন তাদের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে’।
এই মামলায় বিশ্বাসভঙ্গ, অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে। দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি মামলার শুনানিতে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছিলেন।
এদিকে রায় ঘোষণার পর নাজিব সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দিনভর আদালত প্রাঙ্গণে ছিলেন তার সমর্থকরা। মিটিং ও প্রতিবাদ মিছিল করতে দেখা গেছে। নাজিব রাজাক এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পর আদালত সাথে সাথে তা নাকচ করে দেন।
২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ (ওয়ানএমডিবি) তহবিলটি গঠন করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৫ সালে ব্যাংক ও শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে এই তহবিলের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে, এই তহবিল থেকে প্রায় সারে চারশ’ কোটি মার্কিন ডলার অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে আর ব্যক্তিগত হিসাবে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব অর্থ বিলাসবহুল বাড়ি, বিমান, দামি চিত্রকর্ম কেনাসহ নানা বিলাসী কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়েছে।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাজিব রাজাক ও তার জোটের ঐতিহাসিক পরাজয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রাখে ওয়ানএমবিডি আর্থিক কেলেঙ্কারি। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন দেশটির আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যে নাজিবের বিরুদ্ধে প্রতারণার তিনটি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি অভিযোগ আনা হয়। সবমিলে তার বিরুদ্ধে মোট ৪২টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর বেশিরভাগই ওয়ানএমবিডি তহবিল সংক্রান্ত।