ডেস্ক নিউজ:: প্রাণনাশী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সিলেটে সেনা-র্যাব-পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মী এবং রাতের শহরের নিরাপত্তাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সময়ের সম্মুখ যুদ্ধা খ্যাত সাহসী নারী আসমাউল হাসনা খান। যুদ্ধকালে সম্মুখযোদ্ধাদের পাশে থাকতে যে সাহস এবং হৃদয়ের দরকার, চলিশোর্ধ্ব এই ‘বীর নারী’র তা ছিলো বলেই এমন মহৎ কাজের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছেন তিনি। লকডাউন পরিস্থিতিতে যখন নগরের হোটেল- রেস্তোরা- চায়ের দোকানসহ সব ধরণের খাবারের প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তখন রাতের বেলা দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রদানকারী সদস্যদের চা-পানি পান করান তিনি সম্পূর্ণ বিনা টাকায়। আর এতে যে তৃপ্তি পান তিনি, তা কোটি টাকা দিয়েও কেনা যাবে না বলে মন্তব্য ওই নারীর। আসমাউল হাসনা খান। বয়স চলিশোর্ধ্ব। সাংসারিক জীবনে ২ ছেলের জননী। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে সিলেট নগরের দক্ষিণ কাজলশাহ এলাকায় বসবাস করেন। ২০১৭ সালে সিলেট বিভাগে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড-এর পক্ষ থেকে সিলেট জেলায় সেরা রাধূনীর পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আসমা জানালেন, সিলেটে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে যখন দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় নগরের সকল খাবারের দোকানগুলোও। এমন পরিস্থিতিতে সিলেটে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাপ্রদানকারী সদস্যরা ক্লান্ত অবস্থায় কীভাবে-কোথায় একটু চা-পানি পান করবে সে চিন্তা ব্যাকুল করে তুলে আসমাকে। যেই ভাবা সেই কাজ- নিজের জমানো কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়লেন করোনাকালের সম্মুখযোদ্ধাদের সম্পূর্ণ ফ্রিতে চা-পানি পান করাতে। আর পুলিশ-সাংবাদিকরাও দায়িত্ব পালন করে করে যখন তাদের একটু চা-পানির তৃষ্ণা হয়, তখনই স্বরণ করেন প্রিয় ‘আসমা আপা’-কে। ছুটেন জিন্দাবাজারস্থ প্লাজা মার্কেটের সামনে স্প্যাশাল পুদিনা পাতার চা নিয়ে বসে থাকা ‘আসমা আপা’র স্টলের দিকে। আসমা জানান, তিনি একজন নারী উদ্যোক্তা। নারীসমাজের উন্নয়নমূলক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জিন্দাবাজারস্থ প্লাজা মার্কেটে তার ট্রেইলারি দোকান রয়েছে। এবারের ঈদে সেই দোকানে কাপড় তোলার জন্য কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে দোকান-শপিংমল বন্ধ থাকায় তা আর সম্ভব নয়। সেই জমানো টাকা দিয়েই এই মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এ কাজে কারো সহযোগিতা পান কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আসমা জানালেন, স্বামী আবুল খায়ের মাহবুব ও দুই ছেলে তাকে এই কাজে প্রচুর সাহায্য করেন। যখনই চা শেষ হয়ে যায় তখনই তারা বাসা থেকে নতুন কেতলি নিয়ে এসে আসমাকে দিয়ে যান। প্রতিদিন ওয়ানটাইম কাপ, চা-পাতা, চিনি ও অন্যান্য জিনিস ক্রয় বাবদ ৪ থেকে ৫ শ’ টাকার মতো খরচ হয় উল্লেখ করে আসমা বলেন, অনেকেই এ কাজে চা-পাতা বা চিনি দিয়ে সাহায্য করতে চান। কিন্তু এই মুহুর্তে আমি করো কাছ থেকে এমন সাহায্য চাচ্ছি না। আসমা বলেন, আমি চেষ্টা করি সর্বোচ্চ মানের চা সবাইকে পান করাতে। তাই চা’র মধ্যে আদা, পুদিনা পাতা, দারচিনি এলাচি ও লেবু ইত্যাদি মশলা দিয়ে চা বানিয়ে দেই। তবে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে চা দেয়ার সময় আমি সবসময় দূরত্ব বজায় রাখি। এছাড়াও সবাইকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চা পানের কথা বলি এবং আমি নিজে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করি। তিনি জানান, রমজানের আগে আসরের নামাজের পর থেকে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত এভাবে আসমা চা-পানি পান করাতেন, তবে এখন রোজার কারণে তারাবির নামাজের পর থেকে রাত ১১-১২ টা পর্যন্ত করোনাকালের সম্মুখযোদ্ধাদের সেবা দেন এই ‘বীরনারী’।