ডেস্ক :: কারো মন সাগরের চাইতেও বড় হলেই কেবল নিজের স্বপ্ন আর অর্জনকে নিলামে তুলে বিক্রি করতে পারে। আর সেটি করলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর এলাকার কৃতিসন্তান রুহেল বিন ছায়েদ। নিজের কষ্টার্জিত সফলতা আর স্বপ্নের পদক অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য বিক্রি করে দিলেন তিনি। করোনাকালে ক্ষুধার্ত অনাহারিদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিলামে তুলে নিজের ইংলিশ অলিম্পিয়াড মেডেলটি বিক্রি করে অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সিলেটের ওই শিক্ষার্থী, প্রাবন্ধিক ও উদ্যোক্তা।
জানা গেছে, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর এলাকার কৃতিসন্তান বিএসএএ সভাপতি রুহেল বিন ছায়েদ নিজের অর্জিত সবচেয়ে প্রিয় পদকটি সিলেটের ভাদেশ্বরের দরিদ্র মানুষের সাহায্যার্থে নিলামে তুলেছিলেন গত ৭ মে। নিলামে অংশ নেন প্রায় ২৫ জন মানুষ। টানা ২৫ ঘন্টা বিড পাল্টা বিড শেষে সর্বোচ্চ মূল্য দাঁড়ায় ৩৪,৫০০/- টাকা। রুহেল সেই টাকা খরচ হবে সিলেটের ভাদেশ্বরের অসহায় মানুষের জন্য।
নিলামে সর্বোচ্চ বিড করে মেডেলটি কিনে নিয়েছেন সিলেটের ভাদেশ্বরের সন্তান আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মনসুর আহমদ আইয়ুব।
গত ৭ মে রুহেল বিন ছায়েদ তার ফেসবুকে ইংলিশ অলিম্পিয়াড পদকের ছবিটি দিয়ে একটি পোস্ট দেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন- ‘আমার অর্জিত এই মেডেলটি নিজ এলাকার মানুষের জন্য নিলামে তুললাম। আইটেম কোড: #খুশি-০১, আইটেম: ইংলিশ অলিম্পিয়াড মেডেল।’
মেডেলটির বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি লেখেন-
‘মেডেলটি তৈরি করা হয়েছে চায়নার One Way Craft Company থেকে। ডিজাইন করেছেন বিখ্যাত ডিজাইনার মাফরুহা কামাল। মেডেলটি 65 মিমি ব্যাস এবং 5 মিমি পুরু। বাংলাদেশের অলিম্পিয়াড ইতিহাসে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও কারুকাজ সম্পন্ন মেডেল হচ্ছে এটি। মেডেলের সামনের অংশে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সোনালী আঁশ পাটের চিত্র রয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে কৃষকরা পাটের কাজ করছেন এবং সাথে অলিম্পিয়াডের লগো রয়েছে। মেডেলটির অন্যদিকে ভাষা আন্দোলনকে স্মরণ করে শহীদ মিনারের চিত্র খোদাই করা হয়েছে। এ ধরনের সূক্ষ্ণ কারুকাজের মেডেল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোন অলিম্পিয়াডে দেওয়া হয়েছে।
এই প্রোডাক্টটির বেইজ প্রাইসঃ ৩ হাজার টাকা, বিডিং শেষ হবে: আগামীকাল ৮ মে রাত ১১.৫৯ (মোট ২৫ ঘন্টা) , মেডেল বিক্রির টাকা Bhadeswar Social Advancement Association(BSAA) সংগঠনের মাধ্যমে আমার এলাকা ভাদেশ্বরের দরিদ্র পরিবারের জন্য খরচ করা হবে।
বলা বাহুল্য- এই মেডেলটি আমার সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মূল্যবান মেডেলের একটি। এটি পেতে আমাকে ৩ বছর নিরন্তর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ইংলিশ অলিম্পিয়াডের যাত্রার শুরু অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ কলেজের লিড ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করি আমি।কাজের পুরষ্কার স্বরূপ ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক এই প্ল্যাটফর্মের কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও পাবলিকেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাই।
এখন পর্যন্ত একই পদে এই প্ল্যাটফর্মের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছি। টানা তিন বছর ইংলিশ অলিম্পিয়াডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পর ২০১৯ সালে এসে শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে এই মেডেলটি আমি পুরস্কার পাই। এটি আমার জন্য খুবই মূল্যবান ও অহংকার করার মতো একটি মেডেল।
কিন্তু এটি এখন নিলামে তুলেছি করোনার প্রাদুর্ভাবে আমার এলাকা ভাদেশ্বরের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এদের জন্য সহায়তা খুবই জরুরি। এমন না যে আমার এলাকার মানুষ সহায়তা পাচ্ছে না।
বিভিন্ন ব্যাক্তি ও সংগঠন এ এলাকায় দারুন কাজ করছে। আমার সংগঠন বিএসএএ ও প্রায় ২০০ পরিবারকে ইতিমধ্যে সহায়তা প্রদান করেছে। কিন্তু নিজের মধ্যে একটি আত্মোপলদ্ধি এসেছে সম্পূর্ণ নিজের টাকায় কিছু করতে হবে। যেহেতু আমি নিজে কর্মহীন অবস্থায় বাড়িতে চলে এসেছি ২ মাস যাবৎ তাই আমি ব্যাক্তিগতভাবে এ উপায় বেছে নিয়েছি।
আমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধব বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। এ মেডেলের বিনিময়ে যদি আমি কিছু মানুষের খুশির কারণ হই তবে সেটার চেয়ে বড় মেডেল আমার জন্য আর কিছু হবে না। তাই মেডেল কোডের নাম দিয়েছি খুশি-০১।
সারাজীবন এ সুখস্মৃতি মেডেল হিসেবে মনে থাকবে। একই সাথে যিনি এই মেডেলটি কিনবেন তিনিও মানবতার সেবায় নিজেকে যুক্ত করে আজীবন গর্বিত থাকবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এই মেডেলটি তার জন্য হবে গর্বের খোরাক।’