ডেস্ক : মুক্তিযোদ্ধা খান শাহাদাত হোসেন ও নুরুন্নাহার রুনু দম্পতি সন্তানের চোখে-মুখে নিজের ভবিষ্যত দেখতেন। শাহাদাত হোসেন মারা যাওয়ার পর সন্তানকে একা লালনপালন করে নুরুন্নাহার। আর সেই সন্তানের ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
বুধবার (৬ মে) দিবাগত রাত ১টায় রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার গেজেটেড ডর্মেটরির দ্বিতীয় তলার বাসা থেকে মাকে মারপিট করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বখে যাওয়া ছেলে খান মিল্লাত।
নুরুন্নাহার রুনু বলেন, বিপথগামী এই সন্তান কয়েক বছর ধরেই তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন। প্রায় রাতে বন্ধুদের নিয়ে বাসায় মাদকের আসর বসান। মাদকের টাকা যোগাতে বাসার মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রি করে উজাড় করে দিয়েছেন। ফ্রিজ-ফ্যান বিক্রি করে দিয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের মেয়েকে নিয়ে এসে নুরুন্নাহার রুনুকে ঘরে তালা দিয়ে আটকে রাখেন। এই নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন।
এসব ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ করায় বেপরোয়া ছেলে আরও ক্ষেপে যান। এক সপ্তাহ যাবত প্রায় প্রত্যেক রাতেই নিজের মাকে মারপিট করছেন তিনি। ৩ মে রাতে লাঠি দিয়ে পিটান গর্ভধারিনী মাকে।
বুধবারের ঘটনা সম্পর্কে নুরুন্নাহার রুনু জানান, তিনি শুয়ে পড়েছিলেন। রাত ১১ টায় একজন বন্ধুসহ বাসায় ফেরেন তার ছেলে খান মিল্লাত। ফিরেই মাকে বলেন, পিস্তল নিয়ে একজনকে তুলে আনতে গিয়েছিলেন। সেই লোকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়, এক পর্যায়ে গুলি করতে গেলে পিস্তল থেকে গুলি বের হয়নি।
পরে সেই লোক তার পিস্তল কেড়ে নিয়েছে। এখন পিস্তলের মালিককে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় মায়ের মুখে চর-থাপ্পড় মারেন খান মিল্লাত। এরপর মাথা ও শরীরেও মারধর করেন। বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করলে বিছানায় ঠেস দিয়ে ধরে রাখেন।
এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টা তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় রুনুকে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছুরি আনতে বলেন তার বন্ধুকে। এ সময় পাশের রুমে গেলে রুনু দৌড়ে নিচে নেমে আসেন। ছেলেও পিছু নিলে পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা অসহায় মাকে রক্ষা করেন। রাতেই ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পুলিশ ডেকেছিলেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ এলে পালিয়ে যায় খান মিল্লাত।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (৭ মে) কলাবাগান থানায় নুরুন্নাহার রুনু নিজের ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।
নুরুন্নাহার রুনু জানান, মাদকাসক্ত এই সন্তানের জন্য আত্মীয় স্বজন সবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। নিজের বাসা নেই, কারো বাসায় ঠাঁই হয় না। দিনের আলো দেখতে পাবেন এমন আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। ভয়াল ওই রাতের কথা মনে উঠলেই ভয়ে আঁতকে ওঠেন তিনি। নিজের ছেলে এভাবে নির্যাতন করতে পারে কল্পনাও করতে পারেন না তিনি। জীবন বাঁচাতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
মেয়ে জামাই ব্যাংকার আব্দুর রহিম মিয়াও অভিন্ন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন- “মাদকের টাকা না দিলে আমার শাশুড়িকে প্রায় মারপিট করেন আমার শ্যালক খান মিল্লাত। আমরা তার বিচার চাই।”