ভারতে আটক হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক হত্যাকারী রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিন খান। ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে ভুয়া ডাক্তার সেজে এতদিন বসবাস করেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া এই সাবেক সেনাসদস্য। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পরে ভারতীয় গোয়েন্দারা তাকে আটক করে।
তবে এই মুহূর্তে মোসলেহ উদ্দিন কাদের হেফাজতে আছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ভারতের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শুক্রবার রাতে তাকে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আবার অন্য সূত্রের দাবি, ভারতেই তাকে জেরা করা হচ্ছে।
ঢাকায় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা কেউ বিষয়টি স্বীকার করেনি। তবে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, ‘তাকে হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ সূত্রটি আরও বলেছে, এর আগে ধরা পড়া বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি আবদুল মাজেদই রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের খবর গোয়েন্দাদের জানান। সেই সূত্র ধরেই মোসলেহ উদ্দিনের খোঁজ হয়।
এদিকে সংবাদমাধ্যমকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা সরকারিভাবে বিষয়টি জানি না। আমি আমার অফিসকে বলেছি এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিতে।
এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে ভারতের তরফ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানানো হচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, সরকার নিশ্চিত হওয়ার পরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।
ভারতের এক সূত্র জানিয়েছে, বহু দিন ধরেই পরিচয় গোপন করে ঠাকুরনগর অঞ্চলে চিকিৎসক পরিচয়ে বসবাস করছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম হত্যাকারী রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন। ইউনানি ডাক্তার হিসেবে এলাকায় যথেষ্ট পরিচিতিও তার ছিল।
ভারতের দৈনিক আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিনকে উত্তর চব্বিশ পরগনায় একটি গ্রাম থেকে আটক করা হয়। আবার অন্য একটি সূত্রের খবর, মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে গা-ঢাকা দেন মোসলেউদ্দিন। ভারতের গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, লকডাউনের সময় এ দেশ থেকে মোসলেউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে ঢাকা বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দাদের জানায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খুনিকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোনো একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে ছয় আসামি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন, তাদের মধ্যে মোসলেহ উদ্দিন একজন। ওই ছয়জনের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ১১ এপ্রিল মধ্যরাতে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মাজেদও ভারতে গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। ভারতের একটি সংবাদপত্রের দাবি, সূত্র মারফত তারা জানতে পেরেছে, আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার খবর পেয়ে মোসলেহ উদ্দিনও গা-ঢাকা দিয়েছিলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের মিশনে অংশ নেয় তার মধ্যে মোসলেহ উদ্দিন অন্যতম। গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজহাতে গুলি করে হত্যা করে এই মোসলেহ উদ্দিন। ঠাণ্ডা মাথার এ খুনি জেলহত্যা মামলারও আসামি। এরপর অন্য খুনিদের সাথে তিনিও বঙ্গভবনে দায়িত্বপালন করেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাকে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। তখন দেশে তিনি দুই-একবার আসেন বলেও জানা গেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অন্য খুনিদের সাথে তিনিও দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। কয়েক বছর পর যান ভারতে। সেখানে উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।