আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: করোনাভাইরাস প্রথম ছড়িয়ে পড়ে চীনের উহানে। এরপর কয়েক মাসের মধ্যেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই মারণ ভাইরাস। ধারণ করে মহামারি আকার। চীনের বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগ করেন যে চীন সরকার হয়তো করোনা নিয়ে তথ্য গোপন করছে। তাই সত্য উদঘাটন করতে উহান যান দেশটির এক নাগরিক সাংবাদিক।
ফেব্রুয়ারিতে উহান শহরে লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই শেষ ট্রেনটি ধরে সেখানে যান চেন কুইশি নামে ৩৪ বছর বয়সী এক প্রাক্তন আইনজীবী। হাতে ক্যামেরা, পেছনে ব্যাগ নিয়ে সত্য উদঘাটনের জন্য ছুটে চলেন চেন। তিনি একজন নাগরিক সাংবাদিক। সেখানে পৌঁছার পর ওভাররান হাসপাতাল, শেষকৃত্য করার জায়গা ও বাজারগুলোতে যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। ভাইরাসটি প্রথম যে বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে সেখানেও যান তিনি। ক্যামেরায় বন্দি করেন নানা বিষয়।
চেনের ভিডিওতে উহানের নানা সমস্যার কথা ওঠ আসে। তিনি জানান, স্বাস্থ্যকর্মীরা নানা সমস্যায় ভুগছেন। উহানের হাসপাতালগুলোতে অভাব রয়েছে টেস্টিং কিটের। সেখানের কয়েকটি হাসপাতালের প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবের কথাও তুলে ধরেন তার ভিডিওতে। নিজ খরচে তিনি সব করেন। আর এসব ভিডিও প্রচার হওয়ার পর থেকেই তাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখের পর তার আরো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সংবাদ করতে গিয়ে নিজেই হয়ে গেলেন সংবাদের শিরোনাম।
উহানে পৌঁছার এক সপ্তাহ পর চেন কুইশি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি খুব ভীত। আমার সামনে করোনাভাইরাস। আর পেছেনে চীনের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। কিন্তু আমি আত্মপ্রত্যয়ী। আমি যদি এই শহরে বেঁচে থাকি তাহলে সত্য প্রতিবেদন করেই যাব। আমি চোখে যা দেখবো আর কানে যা শুনবো তা নিয়ে প্রতিবেদন করবোই। আমি মারা যেতেও ভয় পাই না।’ চেন যা করেছে তাই অনেক সাহসী কাজ। তার ভিডিও প্রতিবেদনে মহামারির সময়ে আসল তথ্য জানতে পারে সারা বিশ্ব।
সম্প্রতি চেন কুইশির মা এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমি সবাইকে বলছি, বিশেষত আপনি যদি উহানে থাকেন; কুইশির সন্ধান পেতে আমাকে সহায়তা করুন। সেই ভিডিওতে তিনি সাবাইকে অনুরোথ করেন, চেন কুইশির খোঁজ নেওয়ার জন্য। পরে উহানের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, চেন কুইশি তাদের নিয়ন্ত্রণে। তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। চেনের এই কোয়ারেন্টিন কবে শেষ হবে তা কেউই জানে না। কারণ এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি কোথায় তাকে রাখা হয়েছে।
চীনের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যেই কথা বলেছে তার নিখোঁজ হয়ে যাওয়াটা নতুন কিছু নয়। এর আগেও করোনা নিয়ে কথা বলা এক ডক্তারকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর করোনা নিয়ে যদি কেউ গুজব ছড়িয়েছে তাহলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। করোনা নিয়ে প্রথমে যে ডাক্তার সতর্ক করেছিলেন তাকেও পুলিশ হয়রানি করেছে। তাকে পুলিশ সতর্ক করে দিয়ে বলে, মিথ্যা তথ্য ছড়াবেন না।