মৌলভীবাজার : করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সারা দেশে জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি তুলে নেয়ায় ভিড় করছেন হাজারো পর্যটক। বনবিভাগের এমন অসচেতন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সচেতন মহল, আতঙ্কিত স্থানীয়রা।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ সবার জন্য উন্মুক্ত করে। এদিন কোনো প্রকার প্রবেশ মূল্য নেয়া হয়নি। এমনিতে একজন দেশি প্রাপ্তবয়স্ক পর্যটককে উদ্যানে প্রবেশ করতে ৫০ টাকা ফি দিতে হত। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিশেষ করে স্কুল শিক্ষার্থীদের ২০ টাকা করে প্রবেশ মূল্য দিতে হত। আর পর্যটকদের ব্যবহৃত যানবাহন পার্কিং ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে ২৭ টাকা ও বড় বাসের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা দিতে হত।
এমনকি পর্যটকদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যবহৃত যানবাহানেরও কোনো পার্কিং ফি দিতে হয়নি। ফলে এ সুযোগে মঙ্গলবার সকাল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আসেন। এদের মধ্যে কেউ পারবিারিকভাবে, কেউ বন্ধু-বান্ধব মিলে আবার বিভিন্ন সংস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বনভোজন করতে আসেন।
তবে সম্প্রতি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তা আগত পর্যটকদের ভাবায়নি এবং গুরুত্বও দেয়নি বনবিভাগ।
সরজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার বিনামূল্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নারী-পুরুষ, শিশু ও কিশোর মিলিয়ে হাজারো পর্যটকের আগমন ঘটেছে। পর্যটকরা আপন মনে ঘুরে বেড়ান লাউয়াছড়া উদ্যানের বিভিন্ন পাহাড়ি ট্রেইলে (সরু পথে) ও লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির আবাসিক এলাকায়। তাদের অনেকেরই ছিল না কোনো মাস্ক বা সচেতনতা। যেখানে সেখানে থু থু ফেলছেন, একে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করছেন।
সিলেট থেকে পারিবার নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটক আরিফুল হক বলেন, সরকারি ছুটি ও উদ্যানের বিশেষ ছাড়ের ভাবনায় ওই দিনই তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে এসেছেন। তবে পরিবারসহ তিনি করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতন হয়ে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি সংস্থা থেকে আনন্দ ভ্রমণে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, এমনিতেই তারা এ উদ্যানে বেড়াতে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে সরকারি ছুটি ও লাউয়াছড়া উদ্যানের বিশেষ ছাড়ের কথা শুনে আজকের দিনে এখানে বেড়াতে এসেছেন। এখানকার শান্ত নিবিড় পরিবেশ তাদেরকে মুগ্ধ করেছে।
তবে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মান্ত্রী (হেডম্যান) ফিলা পতমী বলেন, দেশি বিদেশি পর্যটকরা প্রতিদিনই এখানে বেড়াতে আসেন। পর্যটকরা লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির পান, জুম ও আবাসিক এলাকা বেড়িয়ে যান। তবে এখন যেহেতু করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় সেহেতু কিছু নিয়ন্ত্রিতভাবে পর্যটক আসলে ভালো হতো। করোনাভাইরাস নিয়ে এমনিতেই খাসিয়া পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত, তার ওপর আজকের নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটকদের আগমন খাসিয়াদের আরও আতঙ্কিত করেছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার অঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, জাতির জনকের প্রতি সম্মান রেখেই বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ১৭ মার্চ লাউয়াছড়া উদ্যানে প্রবেশ উন্মুক্ত রেখেছে। একসঙ্গে এত লোক সমাগম ঝঁকিপূর্ণ হলেও বনবিভাগের বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তাকর্মী, ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক কড়া নজরদারিতে ছিল।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. তৌহীদ আহমদ বলেন, যেকোনো গণজমায়েত নিষেধ করা হয়েছে। এই রকম গণজমায়েত হলে অবশ্যই ঝুঁকি আছে।