বড়ভাঙ্গা নদীর খনন কাজে অনিয়মের বেশ কয়েকটি পোস্ট ফেসবুকে বেশ কয়েকদিন ধরে ভাইরাল হয়ে আছে। এর মধ্যে একটি লাইভ ভিডিও আছে। যে লাইভ ভিডিওটি করেছেন সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার খন্দকার আব্দুর রকিব।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর ফেসবুকপেজ হতে লাইভের মাধ্যমে বড়ভাঙ্গা নদীর খনন কাজে অনিয়ম ও দূর্নীতির ফলে তাঁর ওয়ার্ডের তালতলা বশিরপুর গ্রামের নদীতীরবর্তী মানুষ যে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তা দেশবাসীর নজরে আনার চেষ্টা করেন। যার ফলে নদী খননের পরিবর্তে বশিরপুর গ্রামের নদীতীরবর্তী মানুষের মালিকানা বসতভিটা খননের নির্মম চিত্র অনেকের দৃষ্টিতে আসে। তিনি তাঁর এই ভিডিও যেন প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে তাঁর জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। নদী খননে অনিয়মের পুরো সত্যতা তুলে ধরতে উপস্থিত গ্রামবাসীর কয়েকজনকেও তিনি লাইভে সংযুক্ত করেন। তাঁরাও নদীখননের পরিবর্তে এখানে নদী দূরবর্তী পাড়ে মানুষের বসতভিটা খনন করছেন বলে জানান। মূল নদীর খনন কাজ এড়িয়ে নদীর পাড় খনন করে দায়সারা খনন কাজ যে সম্পন্ন হচ্ছে তা তাদের কথায় পরিস্কার হয়ে উঠে।
মেম্বার খন্দকার আব্দুর রকিব নদী খনন নিয়ে তাঁর ফেসবুক পেজে আজ আবার একটি পোস্ট দিয়েছেন। নদী খননে অনিয়মের জন্য ‘সময় এখন রুখে দাঁড়ানোর’ এমন শিরোনামে তিনি কিছু ছবিসহ পোস্টটি আপলোড করেছেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, বড়ভাঙ্গা নদী খননে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভে টিম। নদীর তলদেশে ২-৩ফুট গভীর করার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীর বেশির ভাগ অংশ খনন না করে শুধু দু’পাশ থেকে কিছু মাটি উত্তোলন করে তীর বাঁধাই করেই দায়সারা ভাবে কাজ করে চলে গেছে। আজ বালাগঞ্জ ও ওসমানী নগরের সংযোগস্থল খালেরমুখ বাজারের উত্তর দিকে সরেজমিন সার্ভে করে এই অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার।
এ ব্যাপারে মেম্বার খন্দকার আব্দুর রকিবের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে নদী খননে এমন অনিয়ম ও দূর্নীতি বন্ধ করে অতি তাড়াতাড়ি পূণরায় সুষ্ঠভাবে নদী খননের জোর দাবি জানান। এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যেন বিচার হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহলের তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি খনন পূর্বে ম্যাপ অনুযায়ী নদী সীমানা নির্ধারণ করা আবশ্যক ছিল বলে উল্লেখ করে বলেন, এ ব্যাপারে ঠিকাদারের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। কারণ প্রতিবছর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অনেকের বসতবাড়ী। যার জন্য নদী ও প্রসারিত হচ্ছে। তাই সঠিক জায়গামত নদী খননের পূর্বে সীমানা নির্ধারণ করা জরুরি ছিল বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে নদ-নদী খননের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। প্রতিবছর শত শত কিলোমিটার নদী খনন করা হলেও আবার ভরাট হয়ে যায়। নদী খননের কাজটি করে থাকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআইডব্লিউটিএ। এই প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ঠিকাদারেরা নদী খননের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ লোপাট করেছেন, এ রকম অনেক নজির আছে। নিরীক্ষায় দুর্নীতির বিষয়টি ধরা পড়লেও জোয়ারের বালুতে নদী ভরাট হয়ে গেছে বলে অসার যুক্তি দেখানো হয়।
নদী খনন নিয়ে যুগান্তরের অনলাই সংস্করে (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০) একটি খবর আমি পড়ি। খবরের শিরোম নাম ছিলো – ‘নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন, দশ হাজার কিমি. নদী খননের পরিকল্পনা, গুরুত্ব পাচ্ছে হাওর ও দক্ষিণাঞ্চল * ব্যয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি * স্বচ্ছতার জন্য খননের আগে ও পরে জরিপ বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি।’ এখন যদি নদী খননে যদি এই স্বচ্ছতা পুরোপুরি জারি হয় তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই খননের সুফল দেশবাসি পাবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সৃষ্টি আর বসতির সঙ্গে নদীর সম্পর্ক রয়েছে। নদী এখানকার অধিবাসীদের জীবন ও জীবিকার মূল উৎস। এই অঞ্চলের সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছে নদীকে কেন্দ্র করে। দেশের রাজধানী ঢাকার চারপাশে ছয়টি নদ–নদী আছে। দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী বলে পরিচিত সিলেটের সিলেট শহর ও সুরমা নদীর তীরে। তাছাড়া আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান হয় কৃষিকাজ করে ও মাছ চাষ করে। এটিও নদী ও জলাশয়নির্ভর। পণ্য পরিবহনের সবচেয়ে সহজ ও কম ব্যয়বহুল পথ হচ্ছে নৌপথ। ফলে নদী রক্ষা পেলে ও নদী খননের ফলে নদীর নাব্যতা বাড়লে সবচেয়ে বেশি উপকার হবে দেশের সাধারণ মানুষ।