মুজিবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ১৭ই মার্চ বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ৪৮টি ইসলামী দল ইতিমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বামপন্থিরাও ৩ দিনের কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর ও কয়েকটি ছাত্র সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে। কেনো বামপন্থিরা কর্মসূচি দিয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে অসম সম্পর্ক, সীমান্ত হত্যা এবং সাম্প্রতিককালে বিজেপির সাম্প্রদায়িক নীতির কারণে তারা মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করছেন।
জুনায়েদ সাকী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে।
ক্ষোভের দু’টো উৎস আছে। একটা হচ্ছে, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের নানাদিক থেকে অসম সম্পর্ক বিরাজ করছে। আমরা দেখছি , আমাদের নদীর নায্য হিস্যাগুলো পাচ্ছি না, সীমান্তে অব্যাহতভাবে আমাদের নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে, তার কোন বিচার হচ্ছে না, এক ধরণের অসম বাণিজ্য এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। নরেন্দ্র মোদির বর্তমান সরকার এবং তার দল বিজেপি-আরএসএস তাদের যে ছ’বছরের শাসন, তার মধ্যে তারা বাংলাদেশবিরোধী নীতি আরও ব্যাপকভাবে কার্যকর করেছে। সেভাবেই বাংলাদেশের মানুষ দেখেন। বিভিন্ন দিক থেকে মানুষের এসব অভিজ্ঞতা হচ্ছে। যার ফলে একটা ক্ষোভ মানুষের মধ্যে আছেই।
তিনি বলেন, সেটা আরও ব্যাপক রূপ নিয়েছে সম্প্রতিক সময়ে তারা নতুন যে নাগরিকপঞ্জি করতে গেলেন, পরে তার ভিত্তিতে তারা নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করলেন। সেটা নিয়ে সারা ভারতের ভেতরেই একটা বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে এবং একদিকে বিজেপি-আরএসএস-এর একটা উগ্র সাম্প্রদায়িক নাগরিক নীতি, অন্যদিকে ভারতের সব ধর্মেরই- হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন সবাই একসঙ্গে এই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। সেটা সাম্প্রতিক সময়ে খুবই একটা সহিংস রূপ নিয়েছে। অর্থ্যাৎ মানুষের এই আন্দোলনের ওপর বিজেপি-আরএসএস সরাসরি হামলা করেছে। রাষ্ট্রীয় মদদে দিল্লিতে একটা ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, আমরা মেঘালয়েও দেখেছি।
এই যে একটা উগ্র সাম্প্রদায়িক নীতি যেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ জায়গায় থাকছে না, এটা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার একটা চেষ্টা আমরা দেখছি। সেটা বাংলাদেশের মানুষকে আরও বিক্ষুব্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে একাত্ম। তারা দক্ষিণ এশিয়ার এই উগ্র সাম্প্রদায়িকতা চান না। বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দিকেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের আগ্রহ। ফলে সেই জায়গা থেকে আমরা অসাম্প্রদায়িক এবং সম্প্রীতির দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষের মোদি সরকারের নীতি এবং বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারে বিরুদ্ধে জনগণের আকাঙ্খাকে ধারণ করে কর্মসূচির কথা বলেছি- উল্লেখ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক।
তিনি জানান, আগামী ১৫ তারিখ সকল প্রগতিশীল দল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদ করবেন। এছাড়া ১৬ এবং ১৮ তারিখ- এই দিনগুলোতেও কর্মসূচি রয়েছে। কর্মসূচিগুলো খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। এর আগেও একবার ঘোষণা করা হয়েছে, তবে সামনে আবারও ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে ছাত্রসহ বিভিন্ন সংগঠন দলগত এবং আলাদাভাবে প্রতিবাদ করছে। বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করছে।