ডেস্ক : যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি ১০ কোটি টাকা খরচ করেন। আর তিন কোটি টাকা খরচ করেছিলেন নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ও তাঁর স্বামী এ তথ্য জানিয়েছেন বলে তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে।
পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল শনিবার বলেছেন, ‘পাপিয়ার পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁরাও নজরদারিতে রয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘শুধু পাপিয়া নয়, অপকর্ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের সঙ্গে যাঁরাই জড়িত, তাঁরা নজরদারিতে আছেন। টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেতা শামিমা নূর পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দল বিব্রত। শুধু পাপিয়া নয়, দুষ্কৃতকারীদের গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
রিমান্ডে থাকা পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর বরাত দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি সূত্র গতকাল জানায়, নরসিংদীতে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেতে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন পাপিয়া। তবে যাঁরা মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাঁরা ব্যর্থ হন। ওই নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—ঢাকা মহানগর যুব মহিলা লীগের তিন নেত্রী, কয়েক সাবেক মন্ত্রী ও এমপি এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েক নেতা। পরে মনোনয়ন পাননি তিনি এবং ১০ কোটি টাকাও ওঠাতে পারেননি। ফলে স্বামী ও সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে তাঁর অপরাধ কর্মকাণ্ড আরো বেড়ে যায়।
সূত্র জানায়, ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ও তাঁর স্বামী সুমন চৌধুরী অনেক তথ্য দিচ্ছেন। তাঁদের কখনো আলাদাভাবে, কখনো দুজনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমান্ডে তাঁদের দুই সহযোগী সাব্বির ও তায়্যিবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীর অপরাধ জগত সম্পর্কে তায়্যিবা ডিবিকে জানিয়েছেন, অনেক সময় চাহিদামতো থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, ভুটান ও রাশিয়া থেকে মেয়েদের নিয়ে আসা হতো। পার্বত্য অঞ্চল থেকেও পাহাড়ি মেয়েদের নিয়ে আসতেন পাপিয়া।
ডিবি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালের দিকে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পাপিয়া খরচ করেছিলেন তিন কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দিয়েছিলেন বিশেষ উপহার। তাঁদের নির্দেশেই ওই সময় পাপিয়া যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পাপিয়া সম্পর্কে র্যাব জানতে পেরেছে, মূলত গ্রাম থেকে কাজের কথা বলে ঢাকায় এনে মেয়েদের দিয়ে অবৈধ কার্যকলাপ করানোই ছিল তাঁর পেশা। এর মাধ্যমে সমাজের উচ্চ শ্রেণির লোকদের ব্ল্যাকমেইলও করতেন পাপিয়া। পাপিয়া রেলওয়ে ও পুলিশের এসআইতে চাকরির প্রলোভনে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা নেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
র্যাব ১-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, পাপিয়ার আয়কর ফাইল তলব করে দেখা গেছে, সেখানে তিনি বছরে ২২ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। অথচ তাঁর প্রতিদিন বারের বিলই আসত আড়াই লাখ টাকা। এত টাকার উৎস কোথায়? জানতে চাইলে পাপিয়া র্যাবকে জানিয়েছেন, যাঁরা হোটেলে আসতেন, তাঁদের কাছে ‘মেয়ে’ পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এরপর ভিডিও ধারণ করে ওই সব ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো। লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খুলত না। পাপিয়ার কারবারে জড়িত সাতজন উঠতি বয়সী তরুণীর সঙ্গে র্যাবের কথা বলা সম্ভব হয়েছে, যাঁদের মাসে ৩০ হাজার টাকা করে দিতেন তিনি। তাঁদের কারো কারো ছবি ‘বড়লোক’ কাস্টমারদের মুঠোফোনে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের আগ্রহ তৈরি করতেন পাপিয়া।
র্যাব জানায়, দেশে স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি পাপিয়ার স্বামীর থাইল্যান্ডে বারের ব্যবসা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন।