পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে রপ্তানি চালুর সিদ্ধান্ত হয়। দুই একদিনের মধ্যেই এই সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করবে ভারতের ‘ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড’। এরপরই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে।
আজ এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
উল্লেখ্য, অতিবৃষ্টির কারণে উত্পাদন সংকট হওয়া অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়ানো ঠেকাতে প্রথমে ২০১৯ সালের আগস্টে দুদফা ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) বাড়িয়ে দেয় ভারত সরকার। এরপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এরপর থেকে বাংলাদেশ চরম বিপাকে পড়ে। হু হু করে বাড়তে গিয়ে পেঁয়াজের মূল্য বিশ্ব রেকর্ড ছুঁয়ে যায়। বিকল্প অনেকগুলো দেশ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলেও দেশের বাজার এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের কথা মুখে মুখে শুনেছেন জানিয়ে খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, স্থলবন্দরে থাকা ব্যবসায়ীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ আসবে এখনও বলতে পারছি না। কিন্তু ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরেই খাতুনগঞ্জের বাজার নিম্নমুখি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জের আড়তে মিয়ানমারের পেঁয়াজ বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, পাকিস্তানের ৬০ টাকা এবং চীনের পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজিতে। দাম আরও কমবে।
ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার ২৬ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন রাজ্যে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার পেঁয়াজের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরা খুশি। কিন্তু ন্যায্যদাম না পেয়ে ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই কৃষকদের স্বার্থে এবং পেঁয়াজের দরপতন ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে রপ্তানি জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরুর জন্য অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দেশটির খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাম বিলাশ পাসোয়ান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এক টুইট বার্তায় বলেন, কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই মূলত পেঁয়াজ রপ্তানি করার বিষয়ে এ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।
বৈঠকে তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়, গেল বছর রবি মৌসুমে পেঁয়াজ উত্পাদন হয়েছিল প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন। আর এ বছর রবি মৌসুমে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এ উত্পাদন ৮৬-৮৭ লাখ মেট্রিক টনে গিয়ে পৌঁছাবে।
এদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী গত জানুয়ারি মাসে এক অনুষ্ঠানে দেশের পেঁয়াজ উ্যৎপাদন মৌসুমে ভারত থেকে আর পেঁয়াজ আমদানি না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহর হলেও ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে কি না তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।