নামাজ মুসলিম জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন মুসলিম কিছুতেই নামাজকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। ঈমান আনার পর ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয়টিই হচ্ছে নামাজ। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে—‘নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনদের ওপর ফরজ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)
ইসলামের পরিভাষায় ফরজ মানেই হচ্ছে অবশ্যকরণীয়। যা না করে কোনো উপায় নেই। নামাজ এমন একটি ইবাদত, যেখানে বান্দা ও তার প্রভুর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি হয়। একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায়কারী একজন মানুষ ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হতে পারেন না। কারণ তাঁর মধ্যে কাজ করে একটু পরই মহান রবের সঙ্গে কথোপকথনের মধুময় মুহূর্তের অনুভূতি। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে অন্তত ৮২ জায়গায় নামাজের কথা বলা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর জীবনের শেষ আদেশও ছিল এই নামাজ।
মুসলিম জীবনের এই নামাজের ইহকালীন ও পরকালীন অনেক উপকারিতা ও ফজিলতের পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায়ও উঠে এসেছে মানবদেহের জন্য এর অভাবনীয় উপকারিতার কথা। আমরা নামাজের রুকনগুলোর বৈজ্ঞানিক উপকারিতার বিষয়ে পর্যায়ক্রমে আলোকপাত করার চেষ্টা করব। সেই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা কথা বলব নামাজের সিজদায় মানবদেহের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা নিয়ে। আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসির একজন চিকিৎসক মুসলিম সমাজে নামাজের এত গুরুত্বের কারণ অন্বেষণ করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন যে মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে হার্ট, যা সারা শরীরে পাম্প করার মাধ্যমে রক্তের প্রবাহ চালু রাখে। প্রতিনিয়ত সারা শরীর থেকে পাম্পিং করে হার্ট রক্ত টেনে আনে এবং আবার তা সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়। আর মানবদেহে হার্টের অবস্থান থেকে বেশি অংশই হার্টের নিচের দিকে হওয়ায় বুক, পেট, কোমর ও পায়ের দিকে খুব সহজেই রক্তের প্রবাহ সৃষ্টি হয় ও চালু থাকে। এমনকি কখনো কখনো খুব বেশি সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে শরীরের নিম্নাংশে অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহের কারণে অসুবিধারও সৃষ্টি হয়। আরো লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মানুষ সাধারণত দাঁড়িয়ে, বসে বা শুয়ে থেকে সময় অতিবাহিত করে থাকে। এর মধ্যে শোয়ার সময় সারা শরীর হার্টের সমান্তরাল পজিশনে এলেও মাথার দিক তখনো হার্ট থেকে নিচে অবস্থান করে না। কিন্তু একজন মুসলিম যখন নামাজ আদায় করেন তখন তিনি প্রতিবার সিজদা করার সময় তাঁর দেহের মাথাসহ ওপরের অংশ হার্টের নিচে অবস্থান করে থাকে। আর ঠিক ওই সময়টায় হার্ট মানবদেহের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মাথায় পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত করে থাকে। পাঠকবৃন্দ! আমরা যাঁরা নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত, তাঁরা একটু খেয়াল করলে অনুভব করতে পারব যে সিজদা করার সময় আমাদের মাথাটা কিঞ্চিৎ গরম ও ভারী অনুভূত হয়। আর সাধারণত সিজদায় বেশি সময় অবস্থান করা হয় না বিধায় বেশি পরিমাণ রক্তপ্রবাহের চাপও খুব বেশি সময় ধরে হয় না। যার ফলে মস্তিষ্কে রক্তের মাত্রাতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির অবস্থা হওয়ারও সুযোগ থাকে না। এভাবে একজন নামাজি প্রতি ওয়াক্ত নামাজে অনেকবার, দিনে অন্তত পাঁচবার যখন দেহের এই ব্যায়ামটুকু করেন, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই অন্য আরো অনেকের তুলনায় অনেকাংশে সুস্থতা অনুভব করেন। তাঁর দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তিসহ স্মরণশক্তিও বেনামাজিদের তুলনায় অনেক বেশি হয়।
নামাজি ব্যক্তির চেহারায় অন্যদের তুলনায় বেশি লাবণ্য পরিলক্ষিত হয়। তার কারণ সিজদা করার সময় মুখের প্রতিটি শিরায় যথেষ্ট পরিমাণে রক্তের প্রবাহ সৃষ্টি হয়। যার অভাবে যাঁরা নামাজ আদায় করেন না তাঁদের চেহারায় একধরনের কালচে আভা দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে।
এ ছাড়া সিজদার সময় নিতম্ব, হাঁটু, টাখনু ও কনুইয়ের ওপর ঝোঁকানো (Flexion) হয়ে থাকে। যখন নলা ও রানের পেছনের পেশি, কোমর ও উদরের পেশি চেপে যায়, তখন কাঁধের জোড়ার পেশিগুলো এর বাইরের দিক থেকে টান লাগে। এর সঙ্গে সঙ্গে মাথার পেছনের অঙ্গগুলোও চেপে যায়। এর সবগুলোই শরীরতত্ত্ববিদ্যার ভাষায় দেহের জন্য খুবই উপকারী বলে প্রমাণিত।
মহিলা নামাজিরা সিজদা করার সময় তাঁদের বুক হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে রাখেন। যেটি শরীরতত্ত্ববিদদের ভাষায় গর্ভাশয়ের সর্বোত্তম চিকিৎসা।
লাখো কোটি শুকরিয়া সেই মহান রবের, যিনি আমাদের এত এত সুন্দর সুন্দর আমল দিয়ে নিজেদের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে সুচারুরূপে সাজিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও অনুবাদক ফকিরের বাজার, নেত্রকোনা।