সাজানো ধর্ষণ মামলায় নিজের স্বামী জেল খাটছেন বলে অভিযোগ করেছেন গোলাপগঞ্জের বাঘা পুরানবাড়ির আব্দুল লতিফের মেয়ে রুকশানা বেগম। এর পেছনে রয়েছেন তার ভাশুর মুসলিম আলী ও তার স্ত্রীর চক্রান্ত। শশুড়ের পেনশনের ৪০ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন তারা। এছাড়া তার স্বামীর সৌদী আরবে উপার্জিত ৫ লাখ ও নিজের ৩০ হাজার টাকাও আত্মসাত করেছেন মুসলিম। এই টাকা ফেরত চাওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মুসলিম আলীর স্ত্রী এসএমপির কোতোয়ালি থানায় তাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলাদায়ের করেন। মঙ্গলবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রোকশানা বলেন, ৪/৫ মাস আগে তার বিয়ে হয় নড়াইল জেলার কালিয়া থানার মৃত সিরাজুল ইসলাম মজুমদারের ছেলে শাহীন কাদের মজুমদারের সাথে। তারা ৪ ভাই, ২ বোন। স্বামীকে নিয়ে আমি নগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়ায় থাকি। এ এলাকার এক্সেল টাওয়ারে সপরিবারে থাকেন আমার ভাশুর মুসলিম আলী। তিনি ও তার স্ত্রী পেশায় হোমিও ডাক্তার। তাদের হোমিও ফার্মেসিতে বিনিয়োগ করবেন বলে স্বামীর কাছ থেকে ৫ লাখ ও আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। এই টাকার লভ্যাংশ দাবি করে না পাওয়ায় পুরো টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে মিথ্যা অভিযোগে সাজানো মামলায় আজ আমার স্বামী কারগারে বন্দী। আমার জা ডাক্তার সাবিহা সুলতানা ১১ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাদায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন যে আমার স্বামী ৩১ ডিসেম্বর রাতে বাসায় গিয়ে তাকে মারধোর, শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। ১১ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানার এসআই দেলোয়ার মিটমাট করে দেয়ার আশ্বাস দিলে আমরা থানায় যাই। পরে ওসি সেলিম মিয়ার নির্দেশে তারা আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেন জেলে পাঠান। এক্সেল টাওয়ারের সিসি ক্যামেরা ২৪ ঘন্টা সচল থাকে। সেদিন সেখানে আমার স্বামী যাননি। সিসি ক্যামেরাই তার প্রমাণ। তিনি বলেন, শুধু এই টাকাই নয়, আমার ব্যাংক কর্মকর্তা শশুড়ের পেনশনের ৪০ লাখ টাকাও লভ্যাংশ দেয়ার নামে আত্মসাত করেছেন তারা। পরিবারের প্রত্যেকের ৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি সবাইকে ৭ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দিবেন বলে সবগুলো টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু কাউকেই লভ্যাংশ দেননি। এমনকি আমার শাশুড়িকেও ঠকিয়ে যাচ্ছেন তারা। ছেলের কাছে লাভের অংশ চাইলে তাকে গালাগালি করে ৫শ’/ হাজার টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। ছোট ভাইয়ের প্রতারণার অভিযোগ জানাতে নড়াইল থেকে সিলেট এসেছিলেন আমার আরেক ভাশুর ফেরদৌস মজুমদার ও ননদ রানী বেগম। কিন্তু তাদেরকে জেল খাটানোর হুমকি দিলে তারা রোববার বিকেলেই খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সেখানে ননদের শশুড় বাড়ি। সোমবার সকালে সেখানে মুসলিম আলী ফেরদৌস মজুমদারকে ধরতে পুলিশ পাঠিয়েছেন। তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই প্রতারক স্বামী-স্ত্রী মিলে তাদের কাজের মেয়েকে নির্যাতন করে চুরির অপবাদ দিয়ে জেলে খাটিয়েছেন। এখন মেয়েটি তাদের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতন আইনে মামলাদায়ের করেছে। আর কাজের মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া এসআই জুবেরকে ক্লোজ করা হয়েছে। আমার জা ডা. সাবিহা সুলতানার চরিত্র নিয়ে এলাকা ও চেনাজানা মহলে নানা কু-কথা প্রচলিত। আগে তার আরো ৩টি বিয়ে হয়েছিল। আমার ভাশুরের সাথে তার চতুর্থ সংসার। ডা. সাবিয়া সুলতানা শাশুড়িকে মারধোরও করেছেন। আমার স্বামী তাদের হোমিও দোকানে চাকরি করতেন ১০ হাজার টাকা বেতনে। গত ৫ মাস থেকে তার বেতনও দিচ্ছেন না তারা। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মুসলিম আলীর মা জানান, সে ও তার স্ত্রী ডাক্তার সাবিহা সুলতানা প্রতারণার মাধ্যমে স্বামীর পেনশনের সব টাকা আত্মসাত করেছেন। এখন টাকা না দেয়ার জন্য দুশ্চরিত্র স্ত্রীর প্ররোচণায় কর্তব্য পরায়ণ ছোট ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জেল খাটাচ্ছেন। রোকশানা ও তার শাশুড়ি এ ব্যাপারে মুসলিম আলী এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যথাযত আইনী পদক্ষেপ গ্রহন ও পেনশনের টাকাসহ যাবতীয় পাওনা উদ্ধার করতে সিলেটের প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। পাশাপাশি তারা মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় জেলে থাকা শাহীন কাদের মজুমদারের মুক্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা।