নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটে কওমি আলেমদের বাধার মুখে মিজানুর রহমান আজহারির ওয়াজ মাহফিল ঠেকে গেল। সিলেটে আজহারি আসছেন এমন সংবাদে গত দু’দিন থেকে কওমি আলেমদের অন্যতম স্থান বৃহত্তর জৈন্তাপুরে বিরাজ করছিল তীব্র উত্তেজনা। এমন পরিস্থিতিতে সিলেটের জেলা প্রশাসন বুধবার তাঁর ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায়ও মিজানুর রহমান বয়ান করে গেছেন। এতে কোন বাধা আসেনি। কিন্তু সিলেটের কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় আগামি ২০ জানুয়ারি দুটি মাহফিলে তাঁর আসার খবরে গোটা জৈন্তাপুরে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। যেকোন মুল্যে কানাইঘাটে তাঁকে প্রতিহত করা হবে এমন ঘোষণা দেন কওমি আলেমদের বড় একটি অংশ।
২০ জানুয়ারি কানাইঘাটের মুকিগঞ্জ বাজার জামেয়া মাঠে অনুষ্ঠিতব্য তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে আসার কথা ছিল তাঁর। মাহফিলের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেন উপজেলার আলিয়া ও কওমিপন্থী আলেম-ওলামা এবং দু\’পক্ষের সমর্থকরা।
আজহারিকে ওইদিন কানাইঘাটে আসতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন কানাইঘাট দারুল উলুম কওমি মাদরাসার অনুসারী আলেম-ওলামা, ছাত্র ও কিছু স্থানীয় লোকজনের একাংশ। এ ইস্যুতে তাদের উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে কানাইঘাট দারুল উলুম কওমি মাদরাসার সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তারা মিজান আজহারিকে \’ইসলামবিরোধী ফতোয়াবাজ আখ্যা দিয়ে কানাইঘাটে তাকে প্রতিরোধ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন বলে বক্তব্য দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কানাইঘাট দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস লক্ষ্মীপুরী। বক্তব্য রাখেন শায়খুল হাদিস আল্লামা আলিমুদ্দীন শায়খে দুর্লভপুরী, আল্লামা শামসুদ্দীন দুর্লভপুরীসহ সিলেটের কয়েকজন শীর্ষ আলেম।
সভার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় \’ইসলামবিরোধী বক্তব্য প্রদানকারী ড. মিজানুর রহমান আজহারিকে আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী (রহ.) পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত কানাইঘাট উপজেলায় আসতে দেয়া হবে না। কানাইঘাটের সর্বস্তরের তৌহিদি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আজহারিকে প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনে লংমার্চের ডাক দেয়া হবে।
ওই দিন দরবস্তের হাজারী সেনাগ্রাম মাঠে ও সিলেটের ওসমানীনগরসহ ৩টি মাহফিলে তার বয়ান রাখার কথা ছিল। আজহারি সিলেটে আসছেন এমন খবরে গত দু’দিন থেকে কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার মানুষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার বিকেল ৩ টায় জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম সিলেটের আলেম সমাজ, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের নিয়ে এক বৈঠক করেন।
বৈঠকে মিজানুর রহমান আজহারীর বিভিন্ন বিতর্কিত ওয়াজ নিয়ে আলোচনা করা হয়। একজন সাহাবী মদ খেয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বিবি খাদিজা (রা.) তালাকপ্রাপ্ত, নবী (স.) এর শরীর ৬ প্যাক ছিল, এধরণের বিতর্কিত ওয়াজ করায় আলেম সমাজে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সভায় আলেমগণ বলেন, এরকম ওয়াজ সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেহেতু তাঁর কিছু বয়ান বিতর্ক তৈরী করছে, সুতরাং সিলেটে আজহারীর অনুষ্টিতব্য সকল মাহফিলে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে সিলেটে কোন ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করলে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে প্রথমে। কেবল প্রশাসন অনুমতি দিলে সিলেটে তিনি ওয়াজ মাহফিলে বয়ান করতে পারবেন।