নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে ইয়াবা পাচারকারীরা দুর্র্ধষ হয়ে ওঠছে। এতোদিন জকিগঞ্জ সীমান্তকে ইয়াবা পাচারের প্রধান রুট ধরা হলেও আইনশৃঙ্খলরক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়াতে দুর্গম সীমান্ত এলাকাগুলোকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে চোরাকারবারিরা। অরক্ষিত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে ভারতীয়রা সরাসরি ইয়াবার চালান এনে পৌঁছে দিচ্ছে এপারে। সহজে চালান হাতে পাওয়ায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন সাধারণ ব্যবসায়ি থেকে জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত।
র্যাব-৯ এর অপারেশন অফিসার এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, বিয়ানীবাজারের দুর্গম মুড়িয়া হাওর বেশ কিছুদিন ধরেই পাচারকারীদের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠেছিল। মধ্যশীতে হাওর শুকিয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ এলাকাতে বিপজ্জনক ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার বাসিন্দা ছাড়া অন্যদের পক্ষে ফাটল ও কাদাপানি ভর্তি খানাখন্দে ভরা হাওড়ে দৌড়ঝাঁপ দূরের কথা নিরাপদে হেঁটে চলাও কঠিন। ভৌগোলিক অবস্থান, চরম প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে মুড়িয়া হাওড় এলাকা দীর্ঘদিন ধরে মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এপার থেকে ধাওয়া করলে ওপারে আর ওপার থেকে ধাওয়া করলে এপারে এসে পড়ার কৌশলে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে র্যাব-৯ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শওকাতুল মোনায়েমের নির্দেশনায় রোববার ঝুঁকিপূর্ণ একটি অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে প্রায় চার কিলোমিটার দুর্গম পথ ধাওয়া করে ৬ হাজার ৭শ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয় দুজনকে। তাদের একজন ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলাধীন গোবিন্দগঞ্জ গ্রামের মৃত অরেন্ড নমসুদ্রের পুত্র বিনন্দ নমসুদ্র (৫৯) এবং সিলেট জেলার বিয়ানিবাজার উপজেলার সুপাতলা গ্রামের মৃত অনীল দাশের পুত্র সুবাস দাশ(৪৯)।
এই ডিসেম্বরেই সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে র্যাব ও পুলিশ লক্ষাধিক পিস ইয়াবা আটক করে। এরমধ্যে রোববার সিলেটের বিয়ানীবাজারের মুড়িয়া হাওরের দুর্গম এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা আটক করে র্যাব। এ অভিযানে এক ভারতীয় নাগরকিকেও আটক করা হয়।
এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ভারতীয়রা সরাসরি মাদক নিয়ে এদেশে ঢুকছে এটি যেমন আমাদের চিন্তিত করেছে একই সাথে আটক সুবাস দাশের পরিচয়ও আমাদের আহত করেছে। ইয়াবাপাচারে জড়িয়ে পড়া সুবাস একটি জুয়েলার্সের মালিক। বিয়ানিবাজার উপজেলা স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্বরত আছেন তিনি।
তিনি বলেন, এতদিন এই এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে কোনো বাহনী সফল হতে পারেনি। এবার একটি বড় সাফল্য এসেছে কিন্তু যেভাবে ইয়াবার সাথে সাধারণ মানুষ জড়িয়ে পড়ছে তা হতাশাজনক।
র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির দেওয়া তথ্যমতে প্রতিদিনই সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ধরা পড়ছে ইয়াবার চালন। চলতি মাসে সিলেটে জব্দ হয়েছে লক্ষাধিক পিস ইয়াবা। তবে এটি মূল চালানের ক্ষুদ্র অংশ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে সিলেটে প্রবেশ করা ইয়াবার স্রোত আরো জোরদার হচ্ছে।