আধুনিক বিশ্বের উন্নয়নের অন্যতম কারিগর জাপান। গত মে মাসে জাপানের রাজধানী টোকিওতে এক সফরে গিয়ে ছিলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শীর্ষ বৈঠকের এক পর্যায়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজোআবে প্রথম দেখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান, ‘বাংলাদেশের সাফল্যের ম্যাজিকটা কী? জবাবে প্রধানমন্ত্রী কিছু রসিকতা করে বলেছিলেন, ম্যাজিক তো সবার সামনে বলা যাবেনা। এ ঘটনার প্রায় দেড় মাসের মাথায় চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে ঘটে আরেক বিস্মকর ঘটনা। চীনা প্রেসিডেন্ট শিজিন পিং শেখ হাসিনার নিকট ‘সোনার বাংলাদেশের বিস্মময়কর অগ্রযাত্রার রহস্য জানতে চান’। শুধু এ দুই বিশ্ব নেতাই নন’ টাইগার ইকোনমির পেছনের ম্যাজিক নিয়ে একধারে বিস্ময় ও উচ্ছাস শোনা যায় বিশ্বসেরা অর্থনীতির বিশ্লেষকদের কন্ঠে। ‘দ্য বাংলাদেশ মডেল’ শিরোনামে পাকিস্তানের, দ্য নেশন পত্রিকায় একটি কলামে পাকিস্তানকে বাংলাদেশ হওয়ার পরামর্শ দেন পাকিস্তানের টকশোর পরিচিত মূখ উন্নয়ন পরামর্শক জাইঘাম খান। তিনি তাঁর লেখায় বলেছেন, রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে গেল, জন্মের ৪৯ বছর পর সেই বাংলাদেশকে এখন রোল মডেল ভাবছে পাকিস্তানের মানুষ। বাংলাদেশ তো পাকিস্তানের মতই একটা দেশ। ধর্মের প্রভাব এখানে খুবই গভীর। বেশিরভাগ মানুষ সুন্নি মুসলিম। আমাদের চিন্তাভাবনা জীবনাচরণে এতমিল। তাহলে পাকিস্তান কেন আটকে গেল এবং বাংলাদেশ এতদূর এগিয়ে গেছে। শুধু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন নয়, অর্থনীতি, মানবিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, সর্ব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে জাইঘাম খান বলেন, বাংলাদেশই হওয়ায় উচিত পাকিস্তানের উন্নয়নের মডেল। পাকিস্তানের যদি কিছু শেখার থাকে, সেটা শিখতে হবে বাংলাদেশের কাছে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী ‘ডন’ পত্রিকায় সে দেশের অন্যতম পরমানুবিজ্ঞানী পারভেজ হুদভয় লেখেন ৫০-৬০ দশকে পাকিস্তানিরা বাঙালীদের হেয় করতো শারীরিক গঠনের কারণে। ১৯৭১ সালে পরাজিত পাকিস্তানিরা ভবিষ্যদ্বানী করেছিল বাংলাদেশ কখনই অর্থনৈতিক ভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা এবং তারা ফিরে আসবে পাকিস্তানের মানচিত্রে।
বাংলাদেশের অগ্রগতি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য তুলে ধরে পাকিস্তান ‘ডন’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাংলাদেশ কোন স্বর্গরাজ্য ছিলনা, শুন্য অবস্থান থেকে নিজেদেরকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ, তাতে বলা হয় কোন কোন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বাংলাদেশকে এশিয়ার পরবর্তী অর্থনৈতিক পরাশক্তি বলে মনে করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৮ ভাগ, পাকিস্তান ৫.৮ ভাগ, ভারত ৮ ভাগ। পাকিস্তানের আরেক উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যম ‘ট্রিবিউন’ সরাসরি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে লিখেছে, তুলনামূলক সম্পদশালী পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা আরও বিস্ময়কর। কারন যুক্তরাষ্ট্র চীন কিংবা সৌদিআরবের মত দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদক পরিপূর্ণ নয়। তাছাড়া দেশটি আভ্যন্তরিন সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু এখনও সেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং উদার পরিবেশ বিরাজমান। বাংলাদেশের এমন এগিয়ে যাওয়া পাকিস্তানের জন্য শিক্ষনীয়।
১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বধীনতার পর সহায়-সম্বলহীন যুদ্ধ বিধবস্ত জাতিকে ‘সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিপুল জনসংখ্যার সদ্য স্বাধীন দেশটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব দেশ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মুখে সামান্য খাবার তুলে দিতে সাহায্যের ঝুলি নিয়ে ঘুরতে হয়েছে ধনী দেশগুলোর দ্বারে দ্বারে। সে সময় অনেক দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যও করেছিল। বাঙালী বার বার মাথা উচু করে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দেশী বিদেশী চক্রান্তে অনেক চেষ্টা ব্যর্থও হয়েছে। তারপরও অনেক চড়াই, উৎরাই পেরিয়ে উন্নয়নের শক্তি ভিত্তির উপর ভর করে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৩তম, ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় বিশ্বের ৩৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রাইস ওয়াটার কুপার হাউস বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৮তম বড় অর্থনিতির দেশ এবং ২০৫০সালে আরও ৫ ধাপ এগিয়ে হবে ২৩ নম্বরে।
ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরাম গত জুন মাসে বলেছিল ২০২০ সালে বাংলাদেশে প্রবৃৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ, ভারত ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করবে, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকবে মালদ্বীপ ও নেপাল এবং ২.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে নিচে থাকবে পাকিস্তান। ইকোনকিম ফোরাম তাঁেদর বøগে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে “দ্রæতধাবমান” আখ্যা দিয়ে বলেছে, ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দ্রæত প্রবৃদ্ধির দেশ হবে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৮.১৩ শতাংশ। আগের বছর ছিল ৭.৯ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। ইকোনমিক ফোরাম অর্থনৈতিক অর্জনের ভূয়শী প্রশংসা করে বলেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর যে দেশ অত্যন্ত গরীব ছিল, সেই দেশের গড় প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অর্জন করে বৈশ্বিক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানোর কারনে মাথাপিছু আয় বেড়েছে উদাহরণ দিয়ে বলা হয় ২০১০ সালে যেখানে এক দিনে ১৫ ডলার ৯০ সেন্টের চেয়ে কম আয়ের শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৭৩.৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে কমে দাড়ায় ১০.৪ শতাংশ। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভূক্ত করে। মোট জাতীয় আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃ্িদ্ধ করে বাংলাদেশ পরিবেশগত ঝুকি মোকাবেলায় চমক সৃষ্টি করেছে। স্বপ্লোন্নত দেশ থেকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০৩০ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান এসব প্রতিবেশী দেশের চেয়ে বড় হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বর্তমানে মোট রপ্তানী আয়ের ৮৫ শতাংশ আসছে তৈরি পোশাক থেকে ৩০ বিলিন ডলার আর দেশজ উৎপাদনের ৫৩ শতাংশ আসছে সেবা খাত থেকে। অর্থনীতির বহুমূখী করণও ঘটেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুরোধ, মানুষের গড় আয়ুবৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন পারিবারিক কাজে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সামাজিক উন্নয়নে প্রশংসা করেছেন বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অর্থনীতির অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষের বয়স এখন ১৫-৬০ বছরের মধ্যে। জনসংখ্যা এমনই এক অর্থনৈতিক উপকরণ যা একই সঙ্গে ‘সম্পদ ও দায়’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যদি সঠিক ভাবে প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ করে তোলা যায় তাহলে আমাদের জনসংখ্যা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। কারণ যে কোন উন্নয়ন কাজের জন্যই দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত লোকবল আবশ্যক। বাংলাদেশের দক্ষ-অদক্ষ মিলিয়ে এক কোটির বেশি শ্রমিক বিদেশ কর্মসংস্থান করছেন। তাঁরা বছরে প্রচুর পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছেন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছেন। এটা এ যাবত কালের মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরিমাণ রেমিট্যান্স। ২০১৮ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার, ২০১৯ সালে দাড়ায় ১ হাজার ৯০৯ ডলার। উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে মাথাপিচু জাতীয় আয় ৩ হাজার ৯৯৬মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে হবে। একই সঙ্গে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১০ থেকে ১১ শতাংশ উন্নীত করতে হবে। প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে উন্নত দেশ নরওয়ের চেয়েও বাংলাদেশ অধিক সম্ভাবনার কথা বলছে বিশ্ব সংস্থাগুলো। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে বর্তমান বাংলাদেশের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ২০৩০ পৌছে যাবে ৭০০ বিলিয়ন ডলারে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় অবস্থানে।
বিবিএস এর তথ্য মতে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি মানুষ চরম দরিদ্র সীমার নিচে বাস করতেন, এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি মানুষ ছিলেন চরম দরিদ্র। বর্তমানে দারিদ্র সীমার নিচে বাস করছেন সোয়া তিন কোটিরও কম মানুষ। ৯০ এর দশকে বাংলাদেশ ৫৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করতেন, এখন মাত্র ২০. ৫ শতাংশ। অতি দরিদ্রের হার কমে ১০.৫ শতাংশ। গত ১৭ ডিসেম্বর একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দারিদ্রের হার ২১.৮ শতাংশ থেকে কমে ২০.৫ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ ১.৩ শতাংশ এখন কমেছে। অতিদারিদ্রের হার কমেছে ৮শতাংশ। অতি দারিদ্র ১১.৩ শতাংশ থেকে কমে ১০.৫ শতাংশ হয়েছে। ২০১৭ সালের দেশের সাবির্ক দারিদ্রের হার ছিল ২৩.১ শতাংশ, অতি দরিদ্রের হার ছিল ১২.২ শতাংশ। ২০২৩ সালের আগেই দারিদ্রের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। অতি দারিদ্রের হার ৫শতাংশের কম হলেই তা শুন্য দারিদ্র হিসেবে ধরা হয়। ১৯৭২ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ১২৯ ডলার। গত ৪৮ বছরে সেই আয় বেড়েছে ১৫গুণ। গত জুন মাসে মাথাপিছু আয় ছিল ১হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ সালে আয় ছিল ১হাজার৭৫১ মার্কিন ডলার। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ৯২৩ ডলার থেকে বেড়ে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে দাড়াঁয় ১হাজার৬১০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের ৫ বছরে কম বয়সী শিশু প্রতি হাজারে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়, ভারতে এ্ই হার ৪৩ এবং পাকিস্তানে ৭৯ জন। বাংলাদেশে ৯৮ভাগ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে। ভারতে এ সংখ্যা সমান হলে পাকিস্তানে ৭২জন।
দেশকে শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ২০১০ সালের আগস্টে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন বিল সংসদে পাস হয়। শেখ হাসিনা দেড় লাখ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার যুগান্তকারী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। প্রতি বছর ২৭ লাখ মানুষ শ্রম বাজারে প্রবেশ করছেন, এখন পর্যন্ত বেকার ৪ কোটি মানুষ। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে ১ কোটি মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, প্রতি বছর অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি ডলার রপ্তানী আয় নিশ্চিত করা। বর্তমানে পন্য রপ্তানী আয় ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার যা এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ পন্য রপ্তানী আয়। ২০০৯-১৯সাল এ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ১৮৮ শতাংশ, ইথিওপিয়া ১৮০ শতাংশ, চীন ১৭৭ শতাংশ, ভারত ১২১ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ২০৩০ সালে পৌঁছে যাবে ৭০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে।
এক সময় বাংলাদেশ বিশ্বে নিন্দিত, অবহেলিত হলেও এখন নন্দিত ও প্রশংসিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বিশ্বের নিকট এখন রোল মডেল। প্রধামন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার প্রশংসা ও গবেষনা করছে বিশ্ব সম্প্রদায়। কিন্তু সাম্প্রতিকালের কিছু ঘটনা বাংলাদেশকে কলংকিত করেছে। বিশেষ করে বুয়েট ছাত্র আহবাব, মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান সহ কয়েকটি ঘটনা দেশ-বিদেশে নিন্দিত করেছে। দেশের অভ্যন্তরে ঘুষ-দুর্নীতি, মানুষে মানুষে বৈষম্য, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দেশের সব অর্জনকে ¤øান করে দিচ্ছে। ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে ১২১ গুন। ধনী দিন দিন ধনী হচ্ছে, গরীব আরও গরীব হচ্ছে। প্রকৃত কৃষকের হাতে চাষের জমি নেই, তারা এখন ভূমিহীন। অঞ্চল ভিত্তিক উন্নয়ন বৈষম্য বেড়েছে। বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের উন্নয়নে অনেক পার্থক্য। ধনীরা ব্যাংকে টাকা আমানত কম রেখে ঋন নেয় বেশী, সেই ঋনের টাকা দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। কৃষক ১০ হাজার টাকা ঋন নিলে মামলা দেওয়া হয়, ব্যাংক লুটেরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করলে কিছুই হয়না। মেঘা প্রকল্প গুলোতে মহা দুর্নীতির খবর গনমাধ্যমে দেখে লজ্জা পেতে হয়। অতি ধনীর সংখ্যা দ্রæত বাড়ছে। বাংলাদেশে এক সময় সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ছিল। এখন চলছে মুক্ত বাজার অর্থনীতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ধনী দরিদ্রের পার্থক্য দুরীকরণের জন্য বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ (বাকশাল) গঠন করেছিলেন, কিন্তু প্রতিক্রীয়াশীলরা না বুঝেই বাকশালকে গালিতে রূপান্তরিত করে দেয়। শেখ হাসিনা দূনীর্তির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন। কিন্তু এক শেখ হাসিনা এদেশে রক্তে মিশে যাওয়া দুর্নীতিরোধে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। দুর্নীতি নির্মুলে সর্বাগ্রে পারিবারিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে নীতি নৈতিকতা সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তবেই সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।