গোয়াইনঘাট :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুধু নেই আর নেই। সাব- কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেক্মো) উজ্জ্বল পাল ও (এম টি) ডেন্টাল সামসুর রহমান সাগরের উপর নির্ভর হয়ে আছে পূরো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা।
যথাসময়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের উপস্থিতি না হওয়ায় দিবারাত্রির চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন উজ্জ্বল পাল ও সাগর। ফলে গোয়াইনঘাটের প্রত্যন্তঞ্চাল থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারীরা মেডিকেল অফিসারদের সাথে পরিচয় না হওয়ায় উজ্জ্বল পাল ও সাগরকে মেডিকেলের বড় ডাক্তার হিসেবে চিনেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যে কজন চিকিৎসক দায়িত্বে রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ। আবার ৩ জনের পোষ্টিং থাকলেও যোগদানের পরদিন থেকেই অনুপস্থিত, সংযুক্ত হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন অন্যত্র।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২১টি, বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৮ জন। তারা সরকারের নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালনের নজির নেই। আর্থোপেডিক, সার্জারি, ইএনটি, চর্ম, যৌন, চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই বছরের পর বছর ধরে। এছাড়াও এনেসথেসিয়া না থাকায় প্রসুতি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইনডোরে ভর্তি রোগীদের একমাত্র ভরসা সেবিকা। কিন্তু তাদেরও দায়িত্বে অবহেলার কারণে রোগীদের সাথে প্রতিদিন বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটছে। নার্সের ক্ষেত্রেও রয়েছে শূণ্যতা, তাই দায়িত্বে অবহেলা আন্তরিকতার ঘাটতির অভিযোগ নার্সদের বিরুদ্ধে।
রাজনগর গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আবদুল মালেক অভিযোগ করেন, নার্সদের একাধিক বার কোন কাজের জন্য বলেও তারা কর্নপাত করেন না। নার্স ২৬ পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২২জন। হাসপাতালের সব টয়লেট ব্যবহার অনুপোযোগী। ৫ জন সুইপারের মধ্যে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২ জন। ওয়ার্ডের বৈদ্যুতিক পাখা বেশীর ভাগ নষ্ট হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের কোন উদ্যোগে নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী অজয় বিশ্বাস জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে এক্স-রে বিভাগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও আল্টাসোনাগ্রাফী মেশিনটি বন্ধ রয়েছে ২ বছরেরও বেশী সময় ধরে। ৩ জন চিকিৎসক গোয়াইনঘাট হাসপাতালে পোষ্টিং হলেও তারা সংযুক্ত হয়ে একজন গাইনি বিভাগের জুনিয়র সার্জন ডাক্তার উম্মুল শিফাত রিজওয়ানা রহমান কর্মরত আছেন সিলেট সদরের খাদিম নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এছাড়া মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আনিসুল হোসেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর ডাক্তার শারমিন মাহবুবা খানম কর্মরত রয়েছেন আইএইসটি সিলেট হাসপাতালে।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দুইজনের পদ থাকলেও দুটি শূন্য, উপজেলার দুটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা বলতে কিছুই নেই, সেখানে মেডিকেল অফিসার, এমএলএসএস সহ সব গুলিই পদই শুন্য।
গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশ পথে একটি ব্যানারে লেখার সাথে বাস্তবতার কোন মিল না থাকায় রোগীরা ক্ষুদ্ধ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ব্যানারে লেখা আছে আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত ডাক্তার মো. রেহান উদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ও ব্যক্তি চরিত্রে অত্যন্ত সজ্জন কিন্তু হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ করছেন একাধিক ভর্তিকৃত রোগী।
আবদুল মতিন অভিযোগ করেন, তিনি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন নিজের দায়িত্ব তুলে দিয়ে যান অন্য মেডিকেল অফিসারের উপর।
হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারে দেখা এক ভিন্ন ধরনের চিত্র। প্রতি টিকেট ৫ টাকা হলেও ১০ টাকা, কিংবা ৫ টাকার নোট যাই দেয়া হোক না কেন ফেরত দেয়া হয়না। ঔষধ বিতরণ কক্ষের দায়িত্বে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে ইতিপুর্বে ঔষধ বিক্রির প্রমাণও পাওয়া গেছে একাধিকবার।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো রেহান উদ্দিন জানান, চিকিৎসক শূন্যতা, সেবক, সেবিকাসহ নানা সমস্যার কারণে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে নিরাপদ পানির অভাব। ৩ জন সুইপার নেই। একজন নাইটগার্ড দিয়ে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রাত্রিকালীন পাহারা।