অতিথি প্রতিবেদক: সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মসজিদের টাকা আত্মসাত, বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণায় অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওয়ার্ডের বেটুয়ারমুখ গ্রামস্থ হযরত শাহজালাল লতিফিয়া মসজিদ এবং গ্রামবাসীর পক্ষে মৃত ধন মিয়ার ছেলে কামাল আহমদ বাদী হয়ে মঈন উদ্দিনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় এ মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২২(৩১৬)/১৯, তারিখঃ ১৮/১২/২০১৯, ধারাঃ ৪২০/৪০৬ পেনাল কোড)। মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ এফআইআর করেছে, তবে এখনও পর্যন্ত কোন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি। মামলার পাশাপাশি এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে মসজিদের টাকা আত্মসাতের বিচার চেয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারসহ অতিরিক্ত কমিশনার এবং উপ-কমিশনার দক্ষিণসহ প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এজাহার সুত্রে জানা গেছে, বেটুয়ারমুখ গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে মঈন উদ্দিন (৪৫) মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার। দীর্ঘদিন থেকে মোল্লারগাঁও ইউনিয়নে নির্বাচন না হওয়ায় তিনি অনেকটা বেপরোয়া হয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তার নানা অপকর্মে এলাকাবাসী অতিষ্ট। কিন্তু নির্যাতন আর হয়রানীর ভয়ে মানুষ খুলতে সাহসী হয় না। মঈন উদ্দিনের মাতা আপ্তাবান বিবি ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি নিজ ছেলের উপস্থিতিতে বেটুয়ারমুখ হযরত শাহজালাল লতিফিয়া মসজিদের কাছে ৭ ডিসিমেল ভূমি বিক্রি করার প্রতিশ্রুতিতে মসজিদের মোতওয়াল্লি যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়েছ আহমদের নিকট থেকে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি শামীম আহমদের মাধ্যমে নগদ ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা নেন। টাকা গ্রহণের পর তিনি মসজিদের নামে ওয়াক্ফনামা সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একখন্ড দলিল প্রস্তুত করেন। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ আপ্তাবান বিবি আকস্মিক মারা গেলে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে উক্ত মঈন উদ্দিন মেম্বার মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তির মালিকানা লাভ করেন। পরবর্তীতে এলাকার মুরব্বিগণ মাতার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দক্ষিণ সুরমা উপজেলার হাজরাই মৌজার ১১১৮ নং ছাপা খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত ৩৮৮৭ ও ৩৮৮৮ নং দাগে উপরোক্ত ৭ ডিসিমেল ভূমি মসজিদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে মঈন উদ্দিন মেম্বারকে অনুরোধ করেন। কিন্তু মঈন উদ্দিন দিমু, দিচ্ছি করে সময়ক্ষেপন করতে থাকেন। এরপরও এলাকাবাসী বারবার তাকে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য চাপ দিতে থাকলে মঈন মেম্বার নানা অজুহাতে গড়িমসি করেন। পরবর্তীতে মোল্লারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ মোঃ মকন মিয়াকে ঘটনা সম্পর্কে এলাকাবাসী অবগত করেন। ইউপি চেয়ারম্যানও তাঁর পরিষদের সদস্য হিসেবে মঈন মেম্বারকে মসজিদের নামের ভূমিটি রেজিস্ট্রি করে মৃত মায়ের ওয়াদা রক্ষার অনুরোধ জানান। কিন্তু চতুর মঈন মেম্বার প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চেয়ারম্যানকে জানান, মসজিদের নামে ভূমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার কোন বিষয় তার জানা নেই এবং ইতোমধ্যেই তিনি এই ভূমি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। বিষয়টি নিস্পত্তিতে ইউপি চেয়ারম্যান ব্যর্থ হয়ে মুরব্বিয়ানদের জানালে এলাকাবাসী বিষয়ের সুষ্টু সমাধান চেয়ে গণস্বাক্ষর গ্রহণপূর্বক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসএমপি কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও উপকমিশনার (দক্ষিণ) বরাবরে পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কামাল আহমদ বাদী হয়ে মসজিদের সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গ এবং মসজিদের ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে মঈন উদ্দিন মেম্বার ও তার পালিত পুত্র আরিফ মিয়া (২৫) ’র বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা দায়ের করেন। থানার অফিসার ইনচার্জ খায়রুল ফজল মামলাটি গ্রহণ করে এফআইআর করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ মামুন মিয়া ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, উক্ত মামলার বিবাদী মঈন মেম্বারের বিরুদ্ধে রিলিফের মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ১৯৯৩ সালের ২৭ জুলাই প্রতিবেশী সোনাহর আলী নামে এক নিরীহ দিনমজুরকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে বিনাদোষে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারপিট করে তাকে মানুষের মল খাওয়ানোর অপরাধে ৬ মাস কারাভোগ করেন। একইভাবে গত ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর সরকার বিরোধী নানা কর্মকান্ডের দায়ের দক্ষিণ সুরমা থানায় তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয় (মামলা নং-১৭/২০১৮, জি আর-২৩৮/১৮)। এই মামলায়ও ১ মাস কারাভোগ করে বর্তমানে জামিনে আছেন। এছাড়া স্থানীয় দৈনিক ‘একাত্তরের কথা’ গত ৩১ অক্টোবর সংখ্যায় মঈন উদ্দিন মেম্বারের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে।