নিজস্ব প্রতিবেদক::সিলেট আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে নগরী সেজেছিলো বর্ণিল সাজে। নগরের অলিগলিতে লাগানো হয়েছিলো ব্যানার ফেস্টুন। ছিলো নেতাবান্ধব স্লোগান, প্রত্যাশা। একদিকে যেমন ছিলো পুনর্র্নিবাচিত করার জোর প্রত্যাশা, তেমনি ছিলো নবীনের আহ্বান। আর নেতাদের মধ্যে ছিলো পাওয়া না পাওয়ার উৎকণ্ঠা। অবশেষে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সকল প্রত্যাশা আর উৎকন্ঠার অবসান ঘটে। তবে প্রত্যাশা আর উৎকন্ঠার অবসান ঘটলেও এখন এক পক্ষে বাজছে বিষাদের সুর আর আরেক পক্ষের মাঝে উৎসবের আমেজ। এ সম্মেলনে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিস্তর ফারাক পরিলক্ষিত হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক জেলা ও মহানগরের কমিটি ঘোষণার সাথে সাথেই নবনির্বাচিতদের উল্লাসে প্রকম্পিত হয়ে উঠে গোটা সম্মেলনস্থল। অপরদিকে পদ হারানো নেতা এবং তার অনুসারীরা স্থম্ভিত হয়ে পড়েন। বিদায়ি নেতা ও তাদের অনুসারীরা বিষাদগ্রস্ত থাকলেও নবনির্বাচিত নেতা ও অনুসারীদের মধ্যে চলছে এখন আনন্দ উৎসব ও অভিনন্দন জ্ঞাপন এবং মিষ্টি বিতরণ।
গত ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। জেলায় আগামী ৩ বছরের জন্য সভাপতি হিসেবে ‘ভারমুক্ত’ হয়ে পুনর্র্নিবাচিত হন লুৎফুর রহমান আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন সর্বশেষ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির খান। অপরদিকে মহানগরে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন অধ্যাপক জাকির হোসেন।
নবগঠিত এসব নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করলেও পদবঞ্চিত নেতা ও তাদের অনুসারীদের মনে আক্ষেপ৷ নেতারা যেমন মন খারাপ করে আছেন তেমনই পদবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরাও আছেন হতাশায়।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের বিদায়ী সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘এটা অবশ্যই পরিবর্তন। নেত্রী মনে করেছেন পরিবর্তন প্রয়োজন তাই পরিবর্তন হয়েছে। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে তাদের সাথে থাকবো। তারা ডাকলে আমি তাদের কাজে সহযোগিতা করবো, সেটা জেলা হোক আর মহানগরই হোক।’
তবে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ’র মনে খানিকটা সন্তুষ্টি আছে। কারণ তিনি সভাপতি পদে আসীন না হলেও তাঁর বড় ভাইকে দলের প্রধান শেখ হাসিনা সভাপতি মনোনীত করেছেন। তাছাড়া আছে কেন্দ্রীয় স্থান পাওয়ার হাতছানি। তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘নতুন নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানাই। আমি আশা করবো আমাদের রেখে যাওয়া কাজ তারা সম্পন্ন করবে। আমরা যেখানে রেখে গিয়েছিলাম তারা ঠিক সেখান থেকেই কাজ শুরু করবেন।’
বিষাদ আর হতাশা মিশে আছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর কন্ঠে। তিনি বলেন, ‘নতুন সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে স্বাগত জানাই। তারা চাইলে আমি যে কোন কাজে সহযোগিতা করবো।’
অপরদিকে উৎফুল্লতা আর পাওয়ার আনন্দ বইছে বিজয়ীদের মনে। চলছে নেতাকর্মী আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে কুশল বিনিময়। সেই সাথে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছায় ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এ শুভেচ্ছায় যুক্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষও।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নাসির খান জানান, ‘নেত্রী আমার উপর আস্থা রেখেছেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি চেষ্টা করবো নেত্রীর আস্তা ধরে রেখে কাজ করার।’
আগামীর কার্যক্রম পরিচালনায় সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদকসহ সকলে আমার দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করবেন, এটা আমি প্রত্যাশা করছি।’
উৎসব আর আনন্দ নগর আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিতদের মাঝেও। তারা নগর আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নেত্রী আমাকে যেভাবে মূল্যায়ন দিয়েছেন এজন্য আমি আনন্দিত। আমি চাই আগামীতে নতুন রূপে নগর আওয়ামী লীগকে সাজাতে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজ এবং যারা পরিচ্ছন্ন তাদের দিয়ে নতুন পুরনোর সমন্বয়ে একটি সুন্দর কমিটি গঠন করা আমার ইচ্ছা। একই সাথে দলের স্বার্থে নিজেকে নিবেদিত করতে চাই।’