নিজস্ব প্রতিবেদক:: গোলাপগঞ্জে কচুরিপানা হাজারো একর ফসলী জমিতে বড় অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। যে জমিতে আউশ, আমন, বোরো সব ধরনের ধান চাষ করা সম্ভব, সে ধরনের অনেক জমি এখন কচুরিপানা গ্রাস করে ফেলেছে। লোকবলের অভাবে অনেকেই কচুরিপানা পরিষ্কার করে ধান চাষে তেমন অগ্রসর হতে পারছেন না। অপরদিকে কচুরিপানা থেকে জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব হলেও কৃষকদের অজ্ঞতার কারণে তা কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কচুরিপানা র কারণে গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। এক্ষেত্রে কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী সমতল ক্ষেতের জমিতে কচুরিপানা র বংশ বিস্তার বেশ দেখা যায়।
গোলাপগঞ্জ প্রাকৃতিকভাবে ভূ-বৈচিত্রের মধ্যে অবস্থিত একটি জনপদ। এ উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে অসংখ্য টিলা রয়েছে। টিলা ছাড়া যেসব জমি রয়েছে তা আবার ঢালু ও উঁচু-নীচু হওয়ায় ইচ্ছে করলেই সব ধরনের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। আবার জমি সমতল না হওয়ায় সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। এক্ষেত্রে কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী অঞ্চলের জমিগুলো বেশ সমতল। আর এই সমতল জমির উল্লেখযোগ্য অংশ কচুরিপানা র দখলে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে বেশি লন্ডন প্রবাসীদের দেশের বাড়ী হচ্ছে বুধবারী বাজার ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের পুরো ভূখন্ড কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেঁষে পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। বুধবারী বাজার ইউনিয়নে কোটি কোটি টাকা খরচ করে লন্ডন প্রবাসীরা আলিশান বাড়ী তৈরি করলেও তা রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখা-শোনার জন্য বাইরের লোকজন নিয়োগ করতে হয়। স্থানীয়ভাবে লোকবলের অভাব থাকায় এমনিতেই ঐ ইউনিয়নের বেশীরভাগ জমি চাষাবাদের আওতার বাহিরে। তারপরও শীতকালে বোরো ফসলের জন্য অনেককেই উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে দেখা যায়। কারণ সমতল ভূমি হওয়ায় শীতকালে পর্যাপ্ত পরিমাণের সেচ সুবিধা থাকে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের ক্ষেতের জমির প্রায় ৬০ ভাগই কচুরিপানা ও বিভিন্ন জাতের জলজ উদ্ভিদের দখলে। এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করে ধান চাষের জন্য জমি উপযোগী করতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই। কচুরিপানা বারো মাস ঐসব জমিগুলোতে থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে মাছ ধরতে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়।
এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, কচুরিপানা র বংশ বিস্তার এতো বেশি যে প্রতি বছর পরিষ্কার করলেও বছর শেষ হওয়ার আগে আবার তা জমি গ্রাস করে ফেলে। কচুরিপানা পরিষ্কার করে ধান চাষ করতে যে খরচ হয় ধান থেকে সে খরচ উঠানো সম্ভব নয় বলে তাদের অভিমত। তাই তো বছরের পর বছর মাঠের পর মাঠ কচুরিপানা দখল করেই আছে। শুধু বুধবারী বাজার নয়, উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ, ভাদেশ্বর, ফুলবাড়ী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাপক পরিমাণ ধান চাষের উপযোগী জমি কচুরিপানা বড় অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগের বক্তব্য হচ্ছে-কচুরিপানা তুলে এক স্থানে জড়ো করে রাখলে কিছুদিনের মধ্যেই তা পঁচে সার হয়ে যায়। কচুরিপানা জৈব সার হিসাবে কৃষি পণ্য উৎপাদনে খুবই উপকারী। কৃষকরা কচুরিপানা কে কাজে লাগাতে পারছেন না বলেই তা আশির্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। কচুরিপানা কে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হলে যে কোন জমিতে ভালো ফলন আশা করা যায়। এছাড়া কচুরিপানা জড়ো করে পানির মধ্যে রাখলে এর উপরে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদন করা সম্ভব বলে কৃষি বিভাগের তথ্যে জানা যায়।