নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের রাজনীতিতে শফিকুর রহমান চৌধুরীর উত্থান ছিলো চমক জাগানিয়া। যুক্তরাজ্য থেকে এসে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে বিএনপির ডাকসাইটে প্রার্থী ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। আর ২০১১ সালে সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ‘খলিফা’ হিসেবে পরিচিত ইফতেখার হোসেন শামিমকে সরিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে সবাইকে চমকে দেন শফিকুর রহমান চৌধুরী।
শফিকুর রহমানের উত্থান যেমন চমকপ্রদ, শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তার বিদায়ও অনেকের কাছে বিস্ময়কর।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে শফিকুর রহমান থাকছেনই- বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনটিই ধরে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। শফিক পদোন্নতি পাচ্ছেন না স্ব-পদে বহাল থাকছেন এটি নিয়েই ছিলো আলোচনা।
তবে নেতাকর্মীদের অবাক করে দিয়ে বৃহস্পতিবার ঘোষিত সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে ঠাঁই হয়নি জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর। অবশ্য বুধবার রাতেই আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকের জেনে গিয়েছিলেন- নেতৃত্বে বড় ধরণের পরিবর্তন আসছে। বাদ পড়তে যাচ্ছেন কামরান-শফিক-আসাদ।
প্রবাসের রাজনীতি থেকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ওঠে আসা শফিকুর রহমান চৌধুরীর খ্যাতি রয়েছে কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে। যেকোনো নেতাকর্মী ডাকলেই তাকে কাছে পায় এমন খ্যাতিও রয়েছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের এই সময়ে শফিকুর চৌধুরী এসব থেকে দূরে ছিলেন বলেও দাবি তার অনুসারীদের। শফিকুর রহমান চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাখা হচ্ছে এমনটিই নিশ্চিত ছিলেন তারা। ফলে বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ঘোষিত নামে শফিকুর রহমান চৌধুরীর না থাকা বিস্ময় হয়ে এসেছে তাদের জন্য। এনিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে আফসোসও প্রকাশ করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে।
তবে কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই। স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শফিকুর রহমান নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে রাজনীতি করেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রায় একক প্রচেষ্টায় দলকে সংগঠিত করার কাজ করেছেন। সবাই ডাকলেই তাকে কাছে পায়। তার বাসাও সকলের জন্য সবসময় উন্মুক্ত থাকে। কিন্তু কারো কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেননি। কমিটিতে তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি।
এ ব্যাপারে শফিকুর রহমান চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জানা যায়, ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ছাত্রজীবনে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য এবং ছাত্রলীগ জাতীয় পরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ৮০’র দশকে যুক্তরাজ্য যাবার পর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকও হন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সাংসদ হয়েছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। ২০১১সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। টানা আট বছর এই দায়িত্ব পালন করেন শফিক।