ভারতের বিহারের দিনমজুর দশরথ মাঝির গল্প আমরা জানি। রাস্তার অভাবে স্ত্রীকে সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পেরে স্ত্রীকে হারান তিনি। তারপর একাকী ২২ বছর ধরে পাথুরে পাহাড় কেটেকেটে তাঁর গ্রামের জন্য একটি রাস্তা বানিয়েছিলেন। তাজমহলের মতোই আরেক প্রেমের উপাখ্যান এই ‘দশরথ মাঝি রোড।’
২.
ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৯৯৩ সালে। ইলিয়াস কাঞ্চন তখন দেশের ব্যস্ততম নায়কদের একজন। কিন্তু তিনি জীবন পণ করলেন এই দেশের সড়ক নিরাপত্তার আন্দোলনে কাজ করতে। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি পথে পথে হাটলেন, পথসভা, মানববন্ধন, এডভোকেসি, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে বৈঠক- কী করেন নি। আমার এখনও মনে আছে, সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে একটা হ্যান্ডমাইক নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন টানা বক্তৃতা করে যাচ্ছেন তো যাচ্ছেনই..এই দেশের সড়কগুলোকে তিনি নিরাপদ করতে চান।
তিনি এদেশের দশরথ মাঝি, আমাদের মূর্খতা, অর্বাচীনতা, অজ্ঞতার পাথুরে পথ কেটেকেটে তিনি এই দেশের জন্য তৈরি করছেন একটি ‘নিরাপদ সড়ক।’ আমাদের উত্তর প্রজন্ম সেই নিরাপদ সড়ক ধরে নির্ভয়ে বাড়ি ফিরবে।
৩.
আপনি যাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন তারা যদি আপনাকে পাল্টা আঘাত করে, আপনার ধ্বংস-মৃত্যু কামনা করে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার আন্দোলন স্বার্থক, আপনার জীবন স্বার্থক। প্রতিপক্ষের প্রতিটি আঘাতই আপনার কাঙ্ক্ষিত সম্মান।
উন্নত বিশ্বে হয়তো ইলিয়াস কাঞ্চনের এই ভালোবাসা আর ক্লান্তিহীন আন্দোলনের গল্প নিয়ে সিনেমা তৈরি হতো।
কিন্তু আমাদের দেশে পথেঘাটে পরিবহন মাফিয়ারা তাঁর ছবিতে জুতোর মালা ঝুলিয়ে রেখেছে।
এর চেয়ে বড় সম্মান আর কী হতে পারে!
ইলিয়াস কাঞ্চন, আপনার জীবন স্বার্থক। আপনার আন্দোলন সার্থক।
এই আন্দোলনকে আরো বিস্তর পথ অতিক্রম করতে হবে, কিন্তু সে ঠিকই তার যাত্রাপথ খুঁজে পেয়েছে।
একদিন এই দেশেও একটা ‘নিরাপদ ইলিয়াস কাঞ্চন রোড’ তৈরি হবে, সে আপনি দেখে যেতে পারলেন কী না পারলেন, তা ম্যাটার করে না।
আপনার জন্য ভালোবাসা।
ফেসবুক থেকে সংগৃহিত
আরিফ জেবতিক: লেখক।