দীর্ঘ ৮ বছর পর আগামী ৪ ডিসেম্বর হতে যাচ্ছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। ঝিমিয়ে পড়া সাংগঠনিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে চাঙ্গাভাব। সবচেয়ে তৎপর হয়ে ওঠেছেন পদ প্রত্যাশী নেতারা। শীর্ষ দুই পদপ্রত্যাশী নেতাদের সমর্থনে নগরজুড়ে বিলবোর্ড-প্ল্যাকার্ডে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কারা আসছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এমন প্রশ্ন সর্বত্র। পুরনো না নতুন নেতৃত্ব- এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলীয় সভানেত্রীই শীর্ষ দুই নেতা বাছাই করে নেবেন, সকলেই এমনটি ধারণা করলেও বসে নেই পদপ্রত্যাশী নেতারা। জোরেশোরেই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। পদপ্রত্যাশীদের ছবি শোভা পাচ্ছে এখন নগরীর বিভিন্ন বিলবোর্ডে। মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বরত নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্মেলন সামনে রেখে ইতিমধ্যে ২৭টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন হয়েছে। কাউন্সিলর নির্বাচনের প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি। ৪ ডিসেম্বর আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে এ সম্মেলন আয়োজন করা হবে। কমিটির শীর্ষ পদ কারা পাবেন এনিয়ে শীর্ষ নেতাদের অনুসারী, ও কর্মী-সমর্থকদের রয়েছে ভিন্নমত। নেতাকর্মীদের একপক্ষ মনে করেন, মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আগামী সম্মেলনে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির আরও বড় পদ দেওয়া হতে পারে। ফলে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি হতে দেওয়া হতে পারে। তবে কামরান অনুসারীরা মনে করেন, আবারও কামরানের উপরই আস্থা রাখেন দলীয় সভানেত্রী। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে বলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ নিজেও এবার সভাপতি পদে প্রার্থী। তবে সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কাউকে আনা হতে পারে এমন আলোচনাও রয়েছে। সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মফুর আলী ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর আবদুল খালিক এবং যুগ্ম সম্পাদক সাবেক সিটি কাউন্সিলর ফয়জুল আনোয়ার আলাওর। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বিজিত চৌধুরী, অধ্যাপক জাকির হোসেন, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, পরিবেশ সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র দাস, শিক্ষা সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কর্মী সমর্থকদের মধ্যে আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা বর্ধিত সভাও করে ফেলেছি। ওয়ার্ড কমিটিগুলোও গঠন করা হয়েছে। সম্মেলনে নেতৃত্বে পরিবর্তনের গুঞ্জন নিয়ে তিনি বলেন, এখন যারাই যেসব কথা বলছেন সব অনুমান নির্ভর কথা। সম্মেলন মানে শুধু নেতৃত্বে রদবদল নয়। সম্মেলনের মাধ্যমে দল সুসংগঠিত হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হন। তাছাড়া জেলা বা মহানগর কমিটিগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রী দেখেন। তিনি বলেন, সাধারণত জেলা বা মহানগর কমিটি করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কম হয়। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যেভাবে বলেন, সেভাবেই কমিটি হয়। তারা দলের জন্য যাদেরকে যোগ্য ও ভালো মনে করেন তারাই কমিটিতে আসেন। তারা যেভাবে বলবেন সেভাবেই কমিটি হবে। এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, সম্মেলনের জন্য সাংগঠনিক প্রস্তুতি শেষ। কাউন্সিলর নির্বাচন চলছে। সার্বিক ব্যবস্থাপনাও চলমান আছে। আসন্ন সম্মেলনে তার প্রার্থিতা নিয়ে তিনি বলেন, কে কোন পদে থাকবেন সেটা জানেন প্রধানমন্ত্রী। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোনো পদে প্রার্থিতা করছি না। তবে সম্মেলন আসলে কর্মী সমর্থকরা তাদের প্রিয় নেতাদের বড় পদে দেখতে চান। তাই তারা বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রচারণা করেন। আমার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। কর্মী সমর্থকরা চাচ্ছেন আমাকে একটি পদে দেখতে। তাই তারা ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে নিজেদের সমর্থন দিচ্ছেন। বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, আন্দোলন বা নির্বাচন সব জায়গায়ই সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োজন। সঠিকভাবে দল পরিচালনা করতে হলে সাংগঠনিক স্বচ্ছতা ও একতা খুব জরুরী। আমাদেরও কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল কিন্তু সেটা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। তাছাড়া একটি সংগঠনের জন্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর সচ্ছলতা খুব জরুরী। তাই আমরা আমাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোকেও সু-সংগঠিত করেছি। এ ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে কাজ করেছি। সেখান থেকে নিজের কর্ম দিয়ে এই পর্যন্ত এসেছি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ভাল পদ পাওয়ার আশা থাকে। আশাকরি এ বিষয়টা তৃণমূলের নেতাকর্মী থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করবেন। তবে আমি মনে করি নেতৃত্বে পরিবর্তন আসা প্রয়োজন। কারণ নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে না। নেতাকর্মীরা কাজের স্পৃহা হারিয়ে ফেলবে। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের স্পৃহা বাড়ানোর জন্য হলেও নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।