বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দল থেকে যেসব রাজনৈতিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে এসেছেন, তাদেরকে দলটি ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। এসব অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা। অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় সিলেট বিভাগ থেকে নাম ওঠেছে ৬৩ জনের। এ তালিকা নিয়ে সিলেটজুড়ে তোলপাড় চলছে। বিশেষ করে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় অনেকের নাম না আসায় এ তালিকা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সারাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০০৯ সাল থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকায় সিলেট বিভাগের ৬৩ জনের নাম এসেছে। এরা কোন দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন, আগে কোন দলে কোন পদে ছিলেন, আওয়ামী লীগে এসে কোন পদ পেয়েছেন, এসবের বিবরণও তালিকায় রয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার ৭ জন, সুনামগঞ্জের ২৬ জন, মৌলভীবাজারের ৮ জন এবং হবিগঞ্জ জেলার ২২ জনের নাম আছে অনুপ্রবেশকারীর তালিকায়।
তালিকায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। তবে এদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা এবং যেসব অনুপ্রবেশকারীর নাম বাদ পড়েছে, তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি তিনি।
আহমদ হোসেন বলেন, ‘এসব কথা সরাসরি সাক্ষাতে বলা যাবে।’
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দুই ভাই ইদ্রিস আলী ও সমুজ আলী, ফেঞ্চুগঞ্জের সদর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আকরাম হোসেন, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা (বিআইডিসি) শ্রমিক লীগ নেতা মোহাম্মদ মুন্না, মাহবুবুল ইসলাম মিছলু, মামুন আহমদের নাম রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার ইকবাল হোসেন তালুকদার, বাবুল মিয়া, আলী মতুর্জা, ধর্মপাশা উপজেলার শফিকুল ইসলাম, ফেরদৌসুর রহমান, মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, মোহাম্মদ মোকাব্বির, মোহাম্মদ এখলাস, ময়না মিয়া, বাবুল মিয়া, তাহের মিয়া, আলাউদ্দিন শাহ, আলম মুন্সি, মহসীন আহমদ, আশরাফ আলী, আলেফর খান, আয়াত আলী, সোহরাব উদ্দিন, রাইস উদ্দিন, সাগর মিয়া, মোহাম্মদ মারুফ, নসর মাস্টার, সুজানগরের আবদুর রশীদ চৌধুরী, আরিফুজ্জামান চৌধুরী, মতিউর রহমান মতি ও শাহজাহান মিয়ার নাম আছে তালিকায়।
মৌলভীবাজার জেলা থেকে অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় এসেছে বড়লেখা উপজেলা তাঁতী লীগের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ আশরাফ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ দক্ষিণ নন্দীপাড়ার শাহ আলম, জুড়ীর শরীফুল ইসলাম টেনু, কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাছিদুর রহমান, ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরুজ মিয়া, ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম নানু, একই ইউনিয়নের মধু মিয়া এবং হাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ বক্সের নাম।
এদিকে, হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি কামাল সরদার, লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান মোল্লা, আজমিরীগঞ্জের আলাউদ্দিন মিয়া ও মোশাহিদ মিয়া, লাখাই উপজেলার রফিকুল ইসলাম মলাই, বানিয়াচং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি এটিএম জুয়েল, হবিগঞ্জ সদরের মাহমুদ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, কয়ছর আহমদ শামীম, আবদুর নুর মাহির, ফরিদ আহমদ, আবু তালেব, আলাউদ্দিন, সোহরাব হোসেন মুহুরী, আবদুস সামাদ, অনু মিয়া, সোনাই মেম্বার, মাধবপুর উপজেলার হামদু মিয়া, সোহেল মিয়া, সাহেদ মিয়া, আবদুল গফুর প্রধান ও আহাদ আলীর নাম অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় আছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বিশ্বনাথের দুই ভাই সমুজ আলী ও ইদ্রিস আলী বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে যোগ দেন আওয়ামী লীগে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইকবাল হোসেন তালুকদার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি হন। ধর্মপাশার শফিকুল ইসলাম জামায়াত থেকে যোগ আওয়ামী লীগে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছিলেন মধু মিয়া। তার চাচাতো ভাই তাজুল ইসলাম মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি। মধু মিয়া এখন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার রফিকুল ইসলাম মলাই করতেন যুবদল। মামলা আছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর স্থানীয় মুড়িয়াউক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হন মলাই।
এদিকে, সিলেট বিভাগে অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় ৬৩ জন থাকলেও বাদ পড়েছে আরো কয়েকজন অনুপ্রবেশকারীর নাম।
জানা গেছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পংকি খান। তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বর্তমানে উপজেলা শাখার সভাপতি পদে আছেন। তার নাম নেই তালিকায়।
দক্ষিণ সুরমার কুচাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, বরইকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিব হোসেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আবুল কালাম জেলা বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে হাবিব হোসেন ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তাদের নামও তালিকায় নেই।
বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাসিব মনিয়া। তিনি গেল ১৬ বছর ধরে এ পদে আছেন। অথচ তিনি রাজাকার ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা করেছিল। সেই তালিকায় ২৩৩ নাম্বারে আছে আব্দুল হাসিব মনিয়ার নাম। আর ২২৩ নাম্বারে আছেন তার বাবা আব্দুল খালিকের নাম। অথচ অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় নেই মনিয়ার নাম।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, অনুপ্রবেশকারীর তালিকা করেই বসে থাকলে চলবে না। এদেরকে দল থেকে বাদ দিতে হবে। একইসাথে যেসব অনুপ্রবেশকারীর নাম বাদ পড়েছে, তাদেরকেও তালিকাভুক্ত করতে হবে।