দলে ঢুকে পড়া অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করছে আওয়ামী লীগ। এ তালিকায় রয়েছে সিলেটেরও অনেক নেতার নাম। যারা সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ হয়ে গেছেন। এ তালিকায় সিলেট বিভাগের ৫৫ নেতাকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ।
এদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ছেড়ে আসা। কোন কোন নেতার মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন, পদ-পদবি পেয়েছেন, তারও সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে তালিকায়। তবে, অনুপ্রবেশকারী সবার নাম তালিকায় আসেনি বলে জানিয়েছেন সংগঠনের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আহমদ হোসেন বলেন, আমার কাছে অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় ৫৫ জনের নাম রয়েছে। তবে কারও নাম বাদ পড়া প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাননি তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় রয়েছেন ৫ নম্বর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা (বিআইডিসি) শ্রমিক লীগ নেতা মোহাম্মদ মুন্না। এ উপজেলায় বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আকরাম হোসেন, মাহবুবুল ইসলাম মিছলু, মামুন আহমদ। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন বিশ্বনাথের ইদ্রিস আলী।
হবিগঞ্জ থেকে নাম এসেছে সদর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি কামাল সরদার, লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুজ্জামান মোল্লা, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী মর্তুজা, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এটিএম জুয়েল।
এ জেলায় বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন হবিগঞ্জ সদরের মাহমুদ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, কয়ছর আহমদ শামীম, আবদুর নুর মাহির, ফরিদ আহমদ, আবু তালেব, আলাউদ্দিন, সোহরাব হোসেন মুহুরী, আবদুস সামাদ, অনু মিয়া, সোনাই মেম্বার; মাধবপুর উপজেলার হামদু মিয়া, সোহেল মিয়া, সাহেদ মিয়া, আবদুল গফুর প্রধান ও আহাদ আলী।
সুনামগঞ্জে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন ধর্মপাশার ফেরদৌসুর রহমান, মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, মোহাম্মদ মোকাব্বির, মোহাম্মদ একলাস, ময়না মিয়া, বাবুল মিয়া, তাহের মিয়া, আলাউদ্দিন শাহ, আলম মুন্সি, মহসীন আহমদ, আশরাফ আলী, আলেফর খান, আয়াত আলী, সোহরাব উদ্দিন, রাইস উদ্দিন, সাগর মিয়া, মোহাম্মদ মারুফ, নসর মাস্টার, সুজানগরের আবদুর রশীদ চৌধুরী, আরিফুজ্জামান চৌধুরী, মতিউর রহমান মতি ও শাহজাহান মিয়া।
তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর মাধ্যমে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন সমুজ আলী ও ইদ্রিস আলী। তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এ দুই ভাই মামলার আসামি হওয়ার পর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন ইকবাল হোসেন তালুকদার। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি হয়েছেন। তার বাবা আফতাব উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে ছিলেন এমন জনশ্রুতির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে এ তালিকায়।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাবুল মিয়া, আলী মর্তুজা, মৌলভীবাজারের বড়লেখার মোহাম্মদ আশরাফ, জুড়ীর শরীফুল ইসলাম টেনু, হবিগঞ্জের লাখাইয়ের নুরুজ্জামান মোল্লা, আজমিরীগঞ্জের আলাউদ্দিন মিয়া ও মোশাহিদ মিয়া মামলার পর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এর আগে বিএনপিতে ছিলেন তারা।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা তাঁতী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আশরাফ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ দক্ষিণ নন্দীপাড়ার শাহ আলম, জেলার কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাছিদুর রহমান, ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরুজ মিয়া, ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম নানু এবং হাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ বক্সের নাম এসে তালিকায়।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মধু মিয়া ছিলেন ভাটেরা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর নেতা। তার চাচাতো ভাই তাজুল ইসলাম মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি। সেই মধু মিয়া এখন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার শফিকুল ইসলামও জামায়াত থেকে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা বনেছেন।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার রফিকুল ইসলাম মলাই যুবদল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর ৩ নম্বর মুড়িয়াউক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে।
হবিগঞ্জের জামায়াত নেতা শাহেদ মিয়া আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্যের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন দলের বেশ কয়েকজন নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কচুয়া বহরের জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে আসা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঘিলাছড়া ইউনিয়নের মিসবাহ আহমদ চৌধুরী, বিএনপি থেকে আসা ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুর রহমান রুমান, দক্ষিণ সুরমার কুচাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, বরইকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিব হোসেন। এদের কারোরই নাম আসেনি অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায়।