স্টাফ রিপোর্টার :: দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে বাবার টানে মাজারে আসা ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ। তাদের কপালে লালসালু আবার বিভিন্ন গ্রুপের ভক্তদের বিভিন্ন রংয়ের পোষাকের ধরণ। সারিবদ্ধভাবে জিকির তুলে ছোটে আসছেন মাজারের উদ্দেশ্যে, লক্ষ্য একটাই! নগরীর দরগাহগেইটস্থ ওলীকুল শিরোমনি হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার প্রাঙ্গণ এবং বাহারি রঙের গিলাফ বাবার মাজারে পৌছে দেওয়া। সারারাত মাজারেই জিকির আজকার করেই রাত পোহাবেন তাঁরা। আর ঠিক এমনি ভাবেই বাবার নৈকট্য কিংবা করুনা পেতে মরিয়া সবাই। আজ এই আধ্যাত্মিক মহাপুরুষের ৭০০ তম বার্ষিক ওরস মোবারক।
মঙ্গলবার (২৩জুলাই) সকাল থেকেই হাজারো ভক্তের গিলাফ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে এই মহা উৎসবযজ্ঞের। বিকেল পর্যন্ত চলবে গিলাফ ছড়ানোর কাজ। রাতে চলবে এবাদত বন্দেগি।
কেউবা নীরবে, কেউ চোখের জলে আবার কেউ নেচে গেয়ে বাবার দরবারে ফরিয়াদ জানাবে মুক্তির। সেই আর্তি বাবার দরবারে পৌছাতে প্রানান্ত প্রচেষ্টা থাকবে ভক্ত আশেকানদের। চলবে ভক্তিমুলক গানের অনুষ্ঠান। মোট কথা ভক্ত -আশেকানদের এই মিলন মেলায় গোটা দরগাহ প্রাঙ্গণ আজ থাকবে মুখরিত।
আজ বুধবার (২৪ জুলাই) ভোররাতে আখেরি মোনাজাতের পর শিরনি বিতরণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয় ওরস।
ওরস উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণে ঢল নেমেছে শাহজালাল ভক্ত-আশেকানদের। সকাল থেকে বিভিন্ন স্লোগানে মিছিলে মিছিলে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে গিলাফ ছড়াতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন ভক্ত আশেকানরা।
কয়েকদিন ধরে ভক্ত-আশেকানদের ভিড় বেড়েই চলেছে মাজার এলাকায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওরসে শরীক হতে আসতে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের অনেকেই অবস্থান করছেন মাজারের আশপাশের হোটেলগুলোতে। আবার অনেকেই বাস ট্রাক নিয়ে এসেছেন, অবস্থান করছেন গাড়িতেই। ফলে সোমবার থেকেই মাজার এলাকা মুখর হয়ে উঠেছে হাজারো লোক সমাগমে।
ওরস উপলক্ষে সোমবার পর্যন্ত ভক্ত-আশেকানরা শতাধিক গরু ও খাসি এনেছেন নজরানা হিসাবে। সারাদেশ থেকে আসা ভক্ত-আশেকানদের মধ্যে শিরনি বিতরণের জন্য পশুগুলো জবাই করা হয়। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত জিকির ও এবাদত বন্দেগির মাধ্যমে ভক্তরা সময় অতিবাহিত করবেন।
বুধবার ভোরে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী ওরস শেষ হবে। মোনাজাতের পর পরই অগণিত ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে শিরনি। ওরসকে ঘিরে মাজার প্রাঙ্গণে বসতে শুরু করেছে বাউলদের আসর। শান্তিপূর্ণভাবে বার্ষিক এই উৎসব সম্পন্ন করতে মাজার কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওরসের নিরাপত্তায় মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে ওরসে আগমনকারীদের নিরাপত্তা পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ কাজ শুরু করেছে। সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ইসলাম প্রচারের জন্য হজরত শাহজালাল (রহ.) ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে ৩৬০ সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেট আসেন। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জিলকদ তিনি ইন্তেকাল করেন। সিলেটের দরগাহ গেট এলাকায় তিনি যে টিলায় বসবাস করতেন সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। তার কবরকে ঘিরেই পরে গড়ে উঠেছে মাজার। এখানেই বিগত ৭০০ বছর ধরে পবিত্র ওরস পালিত হয়ে আসছে।
সিলেট৭১নিউজ/২৪জুলাই/বুধবার/এআ