দীপু সিদ্দিকী, অতিথি প্রতিবেদক :: হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে দুদিনব্যাপী ৭০০তম ওরস মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে। প্রতিবছরের মতো এবারো লাখো ভক্ত আশেকানদের সমাগমের প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আরবী জিলক্বদ মাসের ১৯ ও ২০ তারিখে এ ওরস পালিত হয়।
বুধবার ভোর রাতে আখেরি মোনাজাত ও সকালে শিরনি বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ভক্ত আশেকানদের মিলনমেলা। ইতোমধ্যে ওরসে অংশ নিতে ভক্ত আশেকানরা ছুটে আসছেন সিলেটে। ওরসের শিরণিতে অংশ নিতে মানতের গরু, খাসি, চালসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করছেন মাজারে। এদিকে দুদিনব্যাপী ওরস নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ৩ দিনব্যাপী বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ইসলামের সুমহান বাণী প্রচারে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে হজরত শাহজালাল মুজাররদে ইয়ামনি (রহ.) তার মামা ও গুরু সৈয়দ আহমদ কবিরের নির্দেশে ভারতবর্ষে যাত্রা করেন। যাত্রাকালে গুরু সৈয়দ আহমদ কবির একমুঠো মাটি তুলে দিয়ে শাহজালাল (রহ.) বলেন, যে স্থানে এই মাটির স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণের মিল এক হবে, সেখানেই ধর্ম প্রচারের জন্য আস্তানা গড়তে। মুর্শিদের নির্দেশ মেনেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান ঘুরে সিলেটে এসে মাটির মিল পান। আর সিলেট নগরীতেই আস্তানা করে ধর্ম প্রচারের কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তার ইন্তেকালের পর ভক্ত আশেকানরা মৃত্যুদিবসকে সামনে রেখে ২ দিনব্যাপী ওরসের আয়োজন করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর ৭০০তম ওরস পালিত হবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে হজরত শাজজালাল (রহ.) মাজারে গিলাফ চড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হবে ওরসের আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে গিলাফ চড়ানো হবে। এরপর সারারাত জিকির আজকার, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। রাত ৩টায় আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন বুধবার ভোরে শিরনি বিতরণের মাধ্যমে শেষ হবে ওরস।
এদিকে ওরসে অংশ নিতে মাজার প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেছেন ভক্ত আশেকানরা। তারা ওরসে জবাই করার জন্য প্রচুর গরু ও খাসি দান করছেন। ভক্ত আশেকানদের দান করা গরু ও খাসি শিরনিতে ব্যবহার করা হবে। প্রতিবছরই একশ থেকে দেড়শ গরু ও খাসি ভক্তরা মাজারে দান করেন। এ বছরও বিপুল সংখ্যক গরু খাসি দান করেছেন তারা।
শাহজালাল (রহ.) মাজারের মোতাওয়াল্লি ফতেহ উল্লাহ আল আমান বলেন, ওরস উপলক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর লাখ লাখ ভক্ত আশেকান ওরসে যোগ দেন। তাদের দান করা গরু, খাসি, চাল দিয়ে তৈরি হয় ওরসের শিরনি। ওরসে আজমীর শরীফের খাদেমসহ দেশের বিভিন্ন মাজারের খাদেমরা অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভক্তরা মাজারে আসতে শুরু করেছেন। তবে দেশের বন্যার কারণে ভক্ত আশেকানদের পরিমাণ কমতে পারে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিম মিঞা বলেন, ওরসকে নির্বিঘ্ন করতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে। পাশাপাশি শাজার কমিটির ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাবে। ওরস উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট ৩ স্তরের তিনদিনব্যাপী নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ৫৪ টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সকল প্রবেশপথে পোশাকী পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ও গোয়েন্দা নজরদারি রাখবে। এছাড়া একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি টিম সার্বক্ষনিক মাজার এলাকায় অবস্থান করবে।
ওরসকে কেন্দ্র করে মাজারের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছে মাজার কমিটি। গোটা মাজার এলাকায় সামিয়ানা টানানো, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ শিরনি রান্না ও গরু জবাইসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভক্তদের কাছে দরগা শরিফকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছে মাজার কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ওরস চলাকালীন সময়ে মঙ্গল ও বুধবার দরগাহ এলাকাসহ আশপাশের সকল এলাকায় যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এলাকাগুলো হচ্ছে আম্বরখানা, চৌহাট্টা, দর্শন দেউড়ি, ঝর্ণারপাড়, মীরের ময়দান ও রাজারগলি।
সিলেট৭১নিউজ/২৪জুলাই/বুধবার/এআ