মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারে ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতলে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে সেবিকাদের বিরুদ্ধে এক প্রসূতির অস্ত্রোপচার করে নবজাতকের গলা কেটে ফেলার অভিযোগ ওঠেছে। অস্ত্রোপচারকালে নবজাতকের গলা কেটে ফেলার কারণে বাচ্চাটি মারা যায়।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারকালে নবজাতকের গলা কেটে গেলে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে রেখে পালিয়ে যান সেবিকারা। এসময় বাচ্চা অর্ধেক মায়ের পেটে এবং মাথা ও হাত বাইরে ছিলো। পরে একটি ক্লিনিকে মৃত বাচ্চা প্রসব হয়।
গত রবিবার (১৪ জুলাই) মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
নবজাতকের বাবা মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে উপজেলার কুমড়াকাপন গ্রামের বাসিন্দা মো. আওয়াল হাসান বলেন, গত বরিবার ভোরে স্ত্রীর প্রসব ব্যথা ওঠলে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। প্রথমে নার্সরা রোগী দেখে জানান নরমাল ডেলিভারি হবে। এর পর ১০ টার দিকে একজন চিকিৎসকও এসে চেকআপ করে বলেন, নরমাল ডেলিভারিতেই হবে। এর কিছু সময় পর সেবিকারা আমাকে জানান, অস্ত্রোপচার লাগবে। অস্ত্রপচারের জন্য ওষুধ আনতে একটা স্লিপ ধরিয়ে দেন তারা। এসময় হাসপাতালের একজন ব্যক্তি আমার সাথে দেন ওষুধ নিয়ে আসার আনার জন্য। আমি ওর সাথে না গিয়ে অন্য একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে আনি।
আওয়াল হাসান বলেন, ওষুধ আনার পর সেবিকারা জানান রক্ত লাগবে, তারা এসময় হাসপাতালের একজন লোকের কাছ থেকে রক্ত কিনতে বলেন। আমি তাদের কথা না শোনে বাইরে থেকে এক পাউন্ড রক্ত নিয়ে আসি। এসে দেখি রোগীকে ডেলিভারির জন্য নিয়ে গেছে। এর কিছুক্ষণ পরে নার্স এসে বলেন- বাচ্চা আর বেঁচে নেই। মায়ের অবস্থাও ভালো না। এসময় তারা একটি কাগজে আমার সই নেন।
এরপর ভিতরে গিয়ে দেখি- বাচ্চার হাত বের করা হাতের ডানা ছিড়ে ফেলছেন আর বাচ্চার গলার রগসহ গলা টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। গলা দিয়ে রক্ত ঝরছে অবিরত। আমি দৌড়ে যাই সেবিকাদের আনার জন্য কিন্তু একজন সেবিকাও হাসপাতালে খুঁজে পাইনি।
এরপর আমি স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিক “আল– হামরা হাসপাতালে” রোগিকে নিয়ে যাই। সেখানে আমার স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করেন।
নবজাতকের মা সুমনা বেগম বলেন, সেবিকারা আমাকে জোর করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। তারা আমার পেট থেকে বাচ্চাকে টেনে বের করার চেষ্টা করেন। এতে তার হাত এবং গলার রগ ছিঁড়ে যায়।
এ বিষয়ে আল– হামরা হাসপাতালের ব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের যে চিকিৎসক অস্ত্রপচার করেছেন তিনি নিজেও অবাক হয়েছেন এ ধরনের কান্ড দেখে এবং বিষয়টি সদর হাসপাতাল কতৃপক্ষকে জানাতে বলেছেন।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) রত্নদ্বীপ বিশ্বাস তীর্থ জানান, আমি আজ মাত্র যোগ দিয়েছি বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতের তত্ত্ববধায়ক পার্থ সারথী দত্ত কানুনগো জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার ২ দিন আগে থেকে বাচ্চাটির নড়াচড়া ছিল না । বাচ্চা যদি গর্ভে মারা যায় অনেক সময় ফুলে যায় সে অবস্থায় কেটে বের করতে হয়।
তিনি আরও বলেন , সেদিন ৯ টি অস্ত্রোপচার হয় হাসপাতালে। ওই অস্ত্রপচারের সময় ৩ জন বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। ফলে সেবিকারা অস্ত্রোপচার করেছেন এ অভিযোগ সত্য নয়।
সিলেট৭১নিউজ/এআ