তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক :: ফেসবুক, গুগল ও আমাজনের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর ফ্রান্সের ৩ শতাংশ করারোপের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের এক বাণিজ্য মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্সের বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। এতে অন্যায্য ভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। আমেরিকা প্রতিশোধের হুমকি সত্ত্বেও ফ্রান্স একটি ডিজিটাল পরিষেবা কর অনুমোদন করেছে, যা যুক্তি দেয় যে এটি আমেরিকান প্রযুক্তিবিদদের ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তু করে।
গুগল এবং ফেসবুকের মতো বহুজাতিক সংস্থার দ্বারা ফ্রান্সে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলোতে ৩ শতাংশ কর ধার্য করা হবে।
ফরাসি সরকার যুক্তি দিয়েছে যে দেশের বাইরে সদর দপ্তরে এমন সংস্থাগুলো সামান্য বা কোনো কর পরিশোধ করে না। মার্কিন প্রশাসন এই পদক্ষেপের তদন্তের আদেশ দিয়েছে- যা প্রতিশোধমূলক শুল্কের ফলস্বরূপ হতে পারে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লিথিজার বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে আমরা যেন এই আইনের প্রভাবের বিষয়ে তদন্ত করি। এটি বৈষম্যমূলক বা অযৌক্তিকভাবে মার্কিন বাণিজ্যের ওপর বোঝা বা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কি না।’
তবে এই তদন্তের ফলে প্রতিশোধমূলক শুল্ক বসানো সহজ হতে পারে ট্রাম্পের জন্য। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করে যাচ্ছেন।
৪ঠা জুলাই ফেসবুক, গুগল ও আমাজনের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ৩ শতাংশ কর ধার্যের পরিকল্পনার কথা জানায় ফ্রান্স সরকার।
ফ্রান্সের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বিষয়টি অনুমোদন করে। ফ্রান্স সরকার আশা করছে, তাদের মতো অন্যান্য দেশও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ট্যাক্স বসাবে। বিলটিতে বলা হয়েছে, যেসব ডিজিটাল কোম্পানির বৈশ্বিক রাজস্ব ৭৫ কোটি ইউরোর বেশি এবং ফ্রান্সে রাজস্ব আড়াই কোটি ইউরোর বেশি, সেসব কোম্পানির ওপর এ ৩ শতাংশ কর ধার্য করা হবে।
বিলটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) যেসব দেশে স্বল্প কর ব্যবস্থা চালু, ওই সব দেশে সদর দপ্তর স্থাপন করে ব্যবসা করছে অনলাইন টেকনোলজি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে ফ্রান্সের মতো দেশগুলো। তাদের এ কৌশল ঠেকাতেই এ করারোপ করা হচ্ছে। এ ধরনের একটি আইন নিয়ে ইইউ-এ বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছে। তবে ফ্রান্সই প্রথম এ ব্যাপারে আইন পাস করল।
ফ্রান্সের অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এ কর বাস্তবায়ন হলে ফ্রান্সে ব্যবসা করছে, এমন ডিজিটাল কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বছরে ৫০ কোটি ইউরো আদায় করা যাবে। ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ বলছে, ইউরোপের যেসব অঞ্চলে ট্যাক্স কম, সেখানে কার্যালয় স্থাপন করা ঠেকাতে এ বিল এনেছে দেশটি। ফ্রান্সের মতো দেশে যেখানে বিজ্ঞাপন থেকে ব্যাপক অর্থ আয় করে প্রতিষ্ঠানগুলো, সেখানে প্রায় কোনো ট্যাক্সই দেয় না।
বিলে ডিজিটাল কোম্পানিগুলোর ওপর ৩ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফরাসি সিনেট দ্বারা নতুন কর অনুমোদন করা হয়, এটি নিম্ন হাউস, জাতীয় পরিষদ দ্বারা গৃহীত হওয়ার এক সপ্তাহ পর।
৭৫ কোটি ইউরো (৮৫ কোটি ডলার; ৬৭ কোটি পাউন্ড)-এরও বেশি উপার্জনকারী কোনো ডিজিটাল সংস্থা- যার মধ্যে অন্তত ২ কোটি পঞ্চাশ লাখ ইউরো ফ্রান্সে লেনদেন হয় তা লভ্যাংশ সাপেক্ষে।
এটি ২০১৯-এর প্রথম দিক থেকে বিপরীতভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং এই বছর ৪০ কোটি ইউরো বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক করে বলছে, কর আরোপ করার ফলে তা গ্রাহকদের জন্য বেশি খরচ হবে।
ফ্রান্স কর আরোপ করলে মার্কিন প্রতিষ্ঠান এয়ারবিএনবি ও উবারের মতো চীন ও ইউরোপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উপরেও প্রভাব পড়বে। যেসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের তথ্য ব্যবহার করে অনলাইন বিজ্ঞাপন থেকে অর্থ আয় করে, তাদের লক্ষ্য করে এ বিল এনেছে দেশটি।
সিলেট৭১নিউজ/এআ