স্টাফ রিপোর্টার :: টানা বৃদ্ধির পর অবশেষে কমতে শুরু করেছে সুরমা নদীর পানি। রোববার সিলেটের সবকটি পয়েন্টেই সুরমার পানি কমেছে। তবে এখনও বিপৎসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে সুরমার পানি। অপরদিকে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে কুশিয়ারা নদীর।
সুরমার পানি কমলেও প্লাবিত এলাকাগুলো এখনো পানিতে নিমজ্জিত আছে। ফলে এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছে জেলার পাঁচ উপজেলার দুই লক্ষাধিক লোক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের, সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১.৩ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিলো। আগেরদিন একই সময়ে যা ১.৫৯ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিলেট পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার .৬০ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। শনিবার সন্ধ্যায় এই পয়েন্টে .৬১ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
আর কুশিয়ারা নদীর পানি রোববার সন্ধ্যায় অমলসীদ পয়েন্টে ১.৫৯ মিটার, শ্যাওলা পয়েন্টে ১ মিটার ও শেরপুর পয়েন্টে .৪৮ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। আগেরদিন এসব পয়েন্টে যথাক্রমে ১.৪৫ মিটার, .৮৫ মিটার ও .৪৫ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো পানি।
এছাড়া জৈন্তাপুরে সারী নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার চেয়ে ১৬১ সেন্টিমিটার এবং কানাইঘাটে লোভাছড়ার পানি বিপদসীমার চেয়ে ২০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে, রোববার দিনভর বৃষ্টি ছিলো সিলেটে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। এতে নিম্নাঞ্চলে বন্যার পাশাপাশি নগরীর কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতাও দেখা দিয়েছে। সিলেট সদর, গোয়াইনগাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বন্যাক্রান্ত হয়েছে। এসব উপজেলা আঞ্চলিক অনেক সড়ক এখনো পানির নিচে। বন্ধ রয়েছে শতাধিক স্কুলে পাঠদান। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দুর্ভোগ বাড়ছে পানিবন্দি মানুষদের। রোববার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
এদিকে, সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বৃষ্টি কমে যাওয়ায় নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে মানুষের পাঁচ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো পানি নিচে রয়েছে।
রোববার (১৪ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন, বন্যার পানি ধীর গতিতে কমছে। বৃষ্টি হলেই পানি বেড়ে যাচ্ছে। তবে আগের তুলনায় বৃষ্টিপাত অনেক কমে গেছে। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে বেশ কিছু দিন সময় লাগবে। শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার কমেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের হিসেব মতে শনিবার (১৩ জুলাই) পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০০টি ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে। রোববার পর্যন্ত সারা জেলায় ৩০০ টন চাল, ৩ হাজার ৭৬৫ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় ২১ হাজার পরিবারের ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে আরও নগদ ১০ লাখ টাকা, ৩০০ টন চাল ও ৪০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বন্যায় সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ৩০০ শতাধিক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলেও তিনি জানান।
সিলেট৭১নিউজ/আরএ